গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর আহ্বান

প্রকাশিত : জুলাই ৬, ২০২২ , ১:৫৯ অপরাহ্ণ

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বর্তমান অবস্থা ব্যাখা করে তিনি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন,
“গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর প্রভাব সব জায়গাতে পড়েছে। কোভিড-১৯ এর ধাক্কা যখন সবাই কাটিয়ে উঠছিল তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি সারাবিশ্বকেই গভীর এক সংকটে ফেলেছে। এই সংকট শুধু উন্নয়নশীল দেশেই না অনেক উন্নত দেশেও এর আঁচ লেগেছে। যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি মার্কেট চরম অস্থিতিশীল করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক খাদ্যপণ্যের বাজারও বেসামাল। বৈশ্বিক এই সংকট আমাদেরকেও বিপদে ফেলে দিয়েছে। আপনারা জানেন যে, সম্প্রতি বাংলাদেশ ৫২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির অনন্য মাইলফলক অর্জন করেছে। অর্থাৎ গত একযুগে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে আমাদের শিল্পায়ন অতীতের সকল সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ‘দিন বদলের ইশতাহারে’ উনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিবেন। সেই রূপকল্প আমরা বাস্তবায়ন করেছি। মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুতের কোন বিকল্প নাই। আমরা সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু যুদ্ধের কারণে হঠাৎ করেই কিছুটা ছন্দপতন সব জায়গাতেই। জাপানের মত উন্নত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশও তাদের সাড়ে তিন কোটির বেশি মানুষকে নিয়মিত বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে পারছেনা। একই অবস্থা আরেক উন্নত দেশ অস্ট্রেলিয়ারও। ভারত-পাকিস্তানের কথা নাহয় নাইবা বললাম। অর্থাৎ সবাইকেই এই সংকটকালীন সময়ে রেশনিং করতে হচ্ছে। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১৬০০-১৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। সেখানে আমরা দিতে পারছি মাত্র ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর বেশি গ্যাস আমরা দিতে পারছিনা কারণ আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে কৃষি ও শিল্পখাতকে। কৃষির জন্য সার অপরিহার্য। সার উৎপাদনেও আমাদেরকে অনেক পরিমাণ গ্যাস দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাটাও আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, আমাদের বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের উৎপাদন ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বাকি বৃহৎ অংশ এলএনজি আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময়ও গ্যাসের উৎপাদন ছিল মাত্র দৈনিক ১৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। সেখান থেকে আমরা উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েছিলাম দৈনিক ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত। ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমরা এ সক্ষমতায় গ্যাস উৎপাদন করেছি। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, আমাদের নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন কমতে শুরু করেছে, আমাদের খনিগুলোর রির্জাভ কমে যাওয়ার কারণে। এলএনজি আমদানির জন্য কাতার ও ওমানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় আমরা এলএনজি পাচ্ছি। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি আমদানি করতাম। কোভিড-১৯ এর আগে আমরা এক ইউনিট এলএনজি ৪ ডলারেও আমদানি করেছি কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা ৪১ ডলারও ছাড়িয়ে গেছে। এত উচ্চমূল্যে আমদানি করলে আমাদের অর্থনীতির ওপর বিশাল চাপ তৈরি হবে। শুধু গ্যাসের দামই না, বেড়েছে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম। ২০২১ সালের জুলাইয়ে ডিজেল ব্যারেল প্রতি ৭৭ ডলার ছিল সেটা এ বছরের জুনে ১৭১ ডলারে দাঁড়িয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার নিজস্ব জ্বালানির অনুসন্ধান, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান কূপগুলোতে আরো গভীরে খনন করে গ্যাসের অনুসন্ধান কাজ চালাচ্ছে। এরই মধ্যে আগামী ৩ বছরের একটা আপগ্রেডেশন, ওয়ার্কওভারের স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছি যাতে করে ৪৬টি কূপ থেকে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস নতুন করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতে পারে। এই পরিস্থিতি খুব বেশিদিন থাকবেনা আশা করি। এবছরের মধ্যেই পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ভারত থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট আমদানিকৃত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। আপনাদের নিশ্চয় সবার মনে আছে ২০০৮ সালের আগে সারাদেশে দিনে ১৬-১৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকতো না। সেই কঠিন সময়ে আপনারা জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে বিদ্যুৎখাতের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এই সংকটকালীন সময়েও আপনাদেরকে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বাস রাখতে বলবো। এই সংকট আমরা সবাই মিলেই পার করবো। এই পরিস্থিতিতে সবার কাছে একটাই অনুরোধ আসুন আমরা সবাই গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হই”।

[wps_visitor_counter]