বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত চেক প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিতে চান সুরাইয়া

প্রকাশিত : আগস্ট ১৯, ২০২২ , ৪:৫৪ অপরাহ্ণ

হেলালী ফেরদৌসি, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে স্বাক্ষরিত দুই হাজার টাকার চেকের স্মৃতি নিয়ে পরম যত্নে আগলে রেখে ৪৭ বছর পার করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কোবাদ আলীর সহধর্মিণী সুরাইয়া খাতুন (৭৮)। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে পাঠানো চেকটি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিতে চান সুরাইয়া।
সুরাইয়া খাতুন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ৪নং কাচের কোল ইউনিয়নের কাচের কোল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কোবাদ হোসেনের স্ত্রী। ১৯৭৪ সালের ৮ ডিসেম্বর কাচের কোল গ্রামে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন শেখ কোবাদ আলী। এরপর বঙ্গবন্ধু তার স্ত্রী সুরাইয়া খাতুনকে দুই হাজার টাকার একটি চেক পাঠান। চেক পাঠানোর ১৬ দিন পর ঘাতকদের হাতে নিহত হয় বঙ্গবন্ধু। ৪৭ বসন্ত চলে গেছে তবুও চেকটি আর ভাঙাননি সুরাইয়া ও তার পরিবার। পরিবার ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের প্রত্যয়ন সূত্রে জানা যায়, কোবাদ আলী গণ-আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে নিজ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে যান তিনি। শেষের দিকে দেশে ফিরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। শৈলকুপা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর উপ-প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ১৯৭৪ সালের ৮ ডিসেম্বর রাতে উপজেলার কচুয়া বাজার এলাকায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। তার মৃত্যুর পর ১৯৭৫ সালের ২৮ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে দুই হাজার টাকার একটি চেক পাঠান ডাকযোগে। চেকের সত্যতা নিশ্চিত করে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কোবাদ আলীর বড় ছেলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, আমার বাবার অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে বঙ্গবন্ধু আমার মায়ের নামে চেকটি প্রদান করেন। মা আমাদের ছয় ভাই-বোনের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট করেছেন। সে সময় চেকটির মূল্য অনেক হলেও বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর চেকটি না ভেঙে যত্ন করে রেখে দেন। সংরক্ষণ করে রাখা চেকটি আমাদের কাছে পারিবারিক সম্পদে পরিণত হয়েছে। অনেক সংস্থা থেকে চেকটি চাইলেও আমরা দেয়নি।
চেকের স্বত্বাধিকারী সুরাইয়া খাতুন বলেন, আমার স্বামী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমার ছোট ছেলে গর্ভে থাকাকালীন আততায়ীর গুলিতে তার মৃত্যু হয়। তখন বঙ্গবন্ধু আমাকে চেকটি দেন। আমি চেকটি ভাঙাইনি। ছেলেদেরও ভাঙাতে দেইনি। আমার বয়স হয়েছে, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে চেকটি তুলে দিতে চাই। বিনিময়ে কিছুই চাই না।

[wps_visitor_counter]