পরিবেশের বিপর্যয় রোধে ১০ মিনিটের প্রতিকি অবরোধ

প্রকাশিত : জুন ৫, ২০২৩ , ১০:৪৬ অপরাহ্ণ

ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: প্লাস্টিকের ভয়াবহতা, প্লাস্টিক ও পলিথিনের কারনে পরিবেশের বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাণ-বৈচিত্র্য ও মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা আজ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের কারনে সবুজ উন্নয়নে বাঁধা হতে পারে আমাদের সবুজ শহর রাজশাহী নগরীর। এমনকি প্লাস্টিক ও পলিথিনের কারনেই ধ্বংস হতে পারে আমাদের দেশ ও বিশ্বের প্রাণ-বৈচিত্র্য। চারিদিকে সর্বগ্রাসী প্লাস্টিক ও পলিথিনের রাজত্ব, এ যেন আমাদের সমস্ত জীবকুল ও পরিবেশের দখল দারিত্ব নিয়ে নিচ্ছে। প্লাস্টিক ও পলিথিনের এই ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে এবং এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে সোমবার সকাল ১০টায় উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের যৌথ আয়োজনে রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে রাস্তা অবরোধ করে প্লাস্টিক ধর্মঘট পালিত হয়। প্রতিকি এ প্লাস্টিক ধর্মঘটে বিভিন্ন ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ডে প্লাস্টিক তাঁর নিজের ভয়াবহতার কথা জানান দেয় এবং একই সাথে প্লাস্টিক ও পলিথিন প্রতিকি হিসেবে ১০ মিনিট রাস্তা অবরোধ করে রাখে। প্লাস্টিক এ ধর্মঘটে রাজশাহীর বিভিন্ন তরুণ সংগঠনের প্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজ অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক এবং এর ভয়াবহতার নানা দিক সম্মিলিত লিখা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন হাতে নিয়ে দাড়িয়ে বক্তব্য দেন। অংশগ্রহণকারী বক্তারা বলেন- প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মনুষ্যসৃষ্ট নানা উন্নয়ন দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাব, যুদ্ধ, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার পাশাপাশি বিশ্ব আজ প্লাস্টিক দূষণ ও প্লাস্টিকের জন্য ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি। প্লাস্টিকের জন্য আজ প্রাণ-বৈচিত্র্যসহ আমাদের সুন্দর পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্লাস্টিকের কারনে মানব স্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে। একই সাথে জনজীবন ব্যাপকভাবে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। প্লাস্টিক সমগ্র দুনিয়াকে গ্রাস করছে, দুনিয়ায় যেন বিধ্বংসী প্লাস্টিকের রাজত্ব চলছে। প্লাস্টিকের জন্য পরিবেশ-বান্ধব উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে, চারিদিকে প্লাস্টিকের জন্য নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড় এমনকি আমাদের এই সুন্দর নগরের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলছে। বারসিক’র গবেষক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন – ‘ইউনাইটেড নেশনস’র পরিবেশ কর্মসূচির এক যৌথ গবেষণায় দেখা যায়, নব্বই শতাংশ পাখি এবং মাছের পাকস্থলী থেকে প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে। সেখানে আরো জানা যায় পৃথিবীতে প্রায় আটশত সামুদ্রিক প্রজাতির মধ্যে এ নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। মাইক্রো-প্লাস্টিক মানুষের দেহে প্রবেশের কারণে ব্রেইন ড্যামেজ, অবিসিটি, ক্যান্সার, ডায়াবেটিকস, হৃদরোগ, এ্যাজমাসহ নারীর বন্ধ্যত্বের মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। তিনি আরো বলেন- দিনে দিনে প্লাস্টিক যেন আমাদের জীবন এবং পরিবেশে এক ভয়াবহ হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এই নগর এবং আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশকে প্লাস্টিকের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করা এখন সময়ে দাবি। বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম’র সভাপতি শাইখ তাসনীম জামাল’র সভাপতিত্বে এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আতিক’র সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ এর সভাপতি শামীউল আলীম শাওন, রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ও ঐক্য পরিষদের আহবায়ক মাহবুব টুনকু, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের সভাপতি নকুল পাহান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবজাগরণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি রাসেল সরকার ও সদস্য মমতাজ আক্তার, গ্রীণ ভয়েজ এর রাজশাহীর সমন্বয়ক আব্দুর রহীমসহ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ও ঐক্য পরিষদের আহবায়ক মাহবুব টুনকু বলেন- পরিবেশ সুরক্ষায় আইন করা হয়, কিন্তু সেই আইনের প্রয়োগ আমরা দেখতে পাইনা, মহামান্য আদালতের নিষেধ স্বত্বেও নির্বাচনগুলোতে যাচ্ছে তাই প্লাস্টিক পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি নির্বাচনী আইনে প্রচার প্রচারণাসহ সব ক্ষেত্রে প্লাস্টিক ও পলিথিন বন্ধের দাবি জানান। উল্লেখ্য যে, আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে সামিল হই সকলে’ (Solutions to Plastic Pollution) । দিবসটির প্রতিপাদ্য শ্লোগান ‘সবাই মিলে করি পণ বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ’। উক্ত দিবসকে কেন্দ্র করে প্লাস্টিকের ভয়াবহতা বিষয়ে জনসচেতনতামূলক উক্ত প্লাস্টিক ধর্মঘটের আয়োজন করা হয়। প্লাস্টিক ধর্মঘট শেষে বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি শাইখ তাসনীম জামাল সবুজ শহর রাজশাহীতে প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার, উৎপাদন ও বিপণন বন্ধসহ বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন, ২০০২ এবং মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অবিলম্বে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার দাবি তুলে ধরেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তির।

[wps_visitor_counter]