দস্যুদের নির্মূল করে টাংকির ঘাটে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের দাবী এলাকাবাসীর

প্রকাশিত : জুন ৬, ২০২৩ , ১১:০৭ অপরাহ্ণ

ইয়াকুব নবী ইমন, নিজস্ব প্রতিনিধি, নোয়াখালী, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার হরনী ইউনিয়নের বয়ারচর টাংকির ঘাট এলাকাটি দীর্ঘ দিন জলদস্যুদের আধিপত্য ছিল। বর্তমানে কিছুটা কমলেও রামগতির তেলি রব বাহিনীর কিছু সদস্য এখনো সক্রিয় রয়েছে। দস্যুদের নির্মূল করে সেখানে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ ৩০ বছর এ এলাকায় কোন নির্বাচন না হওয়ায় এবং দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করায় হাজার হাজার মানুষ ছিল অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার। যার ফলশ্রুতিতে এবারের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেও ঐ দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। এদিকে এলাকাটি নোয়াখালী – লক্ষ্মীপুর জেলার সীমানা সংলগ্ন হওয়ায় এবং হাতিয়া, সুবর্নচর ও রামগতি উপজেলার সীমান্ত এলাকা হওয়ায় সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড ছিল বিরাজমান। যার অনেক খবর স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সাংবাদিকদের নজরে আসেনি কখনো । অথচ দিনের পর দিন জলদস্যু বাহিনীর দখলে ছিল পুরো এলাকা। নদীতে জেলেদের বন্ধী করে মুক্তি পণ আদায়, শালিস বিচারের নামে প্রহসন। জোর পূর্বক অন্যের জমি দখল করা। আর এসব অপকর্মের প্রধান নেতৃত্ব দিলেন রামগতির উপজেলার আবদুর রব বেপারী ওরফে তেলি রব। যার বিরুদ্ধে অস্ত্র, ডাকাতির মামলা সহ অসংখ্য মামলা আছে। গত বছর র‌্যাব বিপুল পরিমাণ দেশিয় রামদা, শটগান, বন্দুকসহ তার ঘর থেকে তাকে ও তার ছেলেকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে এসে তিনি তার অপরাধ কার্যক্রম দেদারছে চালিয়ে যান। তিনি নিজেকে মাছ ঘাটের সভাপতি দাবী করে দীর্ঘ দিন যাবত জোর পূর্বক টাংকির ঘাট দখল করে এলাকায় রাম রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তার পিছনে শক্তির যোগান ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা ও রামগতি থানার পুলিশ। রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ প্রশাসনের সেলটারে তেলি রব জেলেদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করে ঐ নেতা আর প্রশাসনকে খুশি করতেন। ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিনসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, এ তেলি রব ছিলেন একজন শুটকি মাছ ব্যবসায়ী। টাংকির ঘাটে টার্মিনালসহ দেড় কিলোমিটারের রাস্তার ৫০ লাখ ইট সে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। একসময় তার কিছুই ছিল না। একটা লুঙ্গি আর ১ টা শাট নিয়ে সে এ চরে আসে বর্তমানে সে শতশত কোটি টাকার মালিক। বিগত ২০১০ সালে সে এ এলাকায় আসে এবং ঘাট জোর পূর্বক জলদস্যু বাহিনী ও রামগতির সন্ত্রাসী নিয়ে এসে দখলে নেয়। তারপর একে একে শুরু হয় তার বেপরোয়া কর্মকাণ্ড। ঘাটে সরকারী জায়গা দখল করে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা খরচ করে ৬২ টি দোকান ঘর নির্মাণ করে। হঠাৎ কোন কারণ বা ঘটনা ছাড়ায় তার রাজত্বের পরিসমাপ্তি ঘটে। গত কয়েকমাস পূর্বে ১ নং চর হরনী ইউনিয়নের নির্বাচন সম্পন্ন করেন নির্বাচন কমিশনার। তখনি নোয়াখালী জেলা পুলিশের নজরে আসে বিষয়টি। নির্বাচন কালীন নোয়াখালী পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল ইসলাম পিপিএম আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে গন-সমাবেশ করেন। তার কঠোর প্রশাসনিক দক্ষতায় নির্বাচন অবাধ ও সহিংসতা মুক্ত নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সম্পন্ন হয়। ঐ নির্বাচনে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদন্ধিতা করেন আওয়ামী লীগ থেকে নৌকার প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আখতার হোসেন। চলে আসে জনগণের প্রতিনিধি। অন্যদিকে পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম সন্ত্রাস দমনে কড়াকড়ি আরোপ করেন। আর এর পর পরই রব বাহিনী পরিস্থিতি বুজতে পেরে রাতের অন্ধকারে দলবলসহ নদী পথ দিয়ে চলে যায়। টাংকির বাজার ও মাছ ঘাট এলাকায় নেমে আসে শান্তি। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে জনগণের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করতে দেখা যায়। তবে সাধারণ জেলে ও ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক এখনো কাটেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী ও জেলে জানান, আমরা শুনেছি তেলি রব আবার ঘাট দখল করবে সে তার শক্তি তৈরি করছে। তার সন্ত্রাসী জলদস্যু বাহিনী আছে। আমাদের এ এলাকাটি সীমানা এলাকা হওয়ায় এখানে রামগতির পুলিশ আইনশৃঙ্খলা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করে। এবং রামগতি পুলিশের সাথে তেলী রবে উঠবস অন্যদিকে প্রভাবশালী রামগতির আওয়ামী লীগ নেতা তার পৃষ্ঠ পোষক। তাই অনেকের মাঝেই আতংক রয়ে গেছে। আমরা আর নির্যাতিত হতে চাই না। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। ভবিষ্যতে রব বাহিনী যাতে এই এলাকায় না আসতে পারে, আমরা ডাকাত-মুক্ত থাকতে চাই। স্থানীয় বাসিন্দা, মাছ ব্যবসায়ী এবং সাধারণ জেলরা টাংকির ঘাটে নোয়াখালী পুলিশ কর্তৃক স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন এবং নিয়ন্ত্রণের জোর দাবী জানায়। হরনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতার হোসেন জানান, নোয়াখালী জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসায় এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। আমরা চাই ভবিষ্যতে যাতে কোন বাহিনী এখানে গড়ে উঠতে না পারে। এ জন্য স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প প্রয়োজন। একই কথা জানান অন্যান্য প্রতিনিধিরাও। এ বিষয়ে নোয়াখালী পুলিশ সুপার আলহাজ্ব শহিদুল ইসলাম পিপিএম জানান, এ এলাকাটি ১ নং হরনী ইউনিয়নে যা হাতিয়া উপজেলা তথা নোয়াখালীর এলাকা। এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। যেহেতু এটা সম্পূর্ণ নোয়াখালীর এলাকা। এখানে অন্যকোন জেলা বা অন্য কোন এডমিনিস্ট্রেশন এর কোন ভূমিকা নেই। এখানে আলাদা ফোর্স যেহেতু আছে তারা থাকবে তারা হাতিয়া থানা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে। তারা এক্সট্রা ফোর্স হিসেবে হাতিয়া থানার পুলিশের সাথে সমন্বয় করে কাজ করবে। এখানকার আইনশৃঙ্খলার সকল দায়িত্ব নোয়াখালী জেলা পুলিশ তথা হাতিয়া থানা পুলিশের।

[wps_visitor_counter]