যৌতুকের মামলায় আদালতের যুগান্তকারী রায়

প্রকাশিত : মে ২৬, ২০২২ , ৯:২৮ অপরাহ্ণ

ডিজার হোসেন বাদশা, পঞ্চগড় প্রতিনিধি, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: দীর্ঘ আট বছরের সংসার জীবন। এর মাঝে তিনটি ফুটফুটে ছেলে সন্তানের জননী ও জনক হয় আসমা-সাইফুল দম্পত্তি। কিন্তু সংসার জীবনে অভিশপ্ত হয়ে আসে যৌতুক! যৌতুকের কারণে বিচ্ছেদ হয় সংসার জীবনের। এর মাঝে নিজের মর্যাদা ফিরে পেতে স্বামী সাইফুলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে স্ত্রী আসমা। দীর্ঘ শুনানিতে স্ত্রীর মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে এক ভিন্ন রায়ে নজির স্থাপন করেছেন পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) আদালতের বিচারক মতিউর রহমান। জানা যায়, গত ২০১৩ সালে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী আরাজি গাইঘাটা গ্রামের মমতাজ আলীর মেয়ে আসমা বেগমের বিয়ে হয় ঠাকুরগাঁও সদরের শোল্ড হরি গ্রামের সাইফুল ইসলামের সাথে। দীর্ঘ আট বছর সংসার জীবনে আসমাকে শয়তে হয় বিভিন্ন সমস্যা। এর মধ্যে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনসহ যৌতুকের দাবী তোলা হলে বিচ্ছেদের মাধ্যমে ঠাকুরগাঁও থেকে ময়দানদিঘী আরাজি গাইঘাটা গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে আসে আসমা। এর মাঝে গত ২১/১২/২০২১ তারিখে বাবার বাড়িতে থাকতে থাকতে অবশেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছে আসমা। পুলিশ তদন্ত করে মামলাটির সত্যতা পেয়ে চার্জশিট দাখিল করে আদালতে। বৃহস্পতিবার (২৬ মে) দুপুরে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) আদালতে দীর্ঘ শুনানি বসে। শুনানিতে ও পুলিশের দেয়া তদন্ত রিপোর্টে আদালতের বিচারক মতিউর রহমান স্পষ্ট বুঝেন স্বামীর বিরুদ্ধে আসমার অভিযোগগুলো অমূলক নয়। পরে স্ত্রী আসমাকে সাথে নিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা সম্পণ্য পণ্য কিনতে সময় বেধে দেয় বিচারক। আর এর মাধ্যমে পুনরায়া তাদের সম্পর্ক জুটি বাধায় আপাতত নিষ্পত্তি হয় মামলাটির।
আদালত সূত্রে জানা যায়, যৌতুকের কারণে স্বামী সাইফুল স্ত্রী আসমাকে নির্যাতন করে। সংসার জীবনে তেল, সাবান, কাপড়-চোপড় কিনে দেয় না ঠিকমতো। বউকে সারা বছরে দুটি শাড়ি কিনে দেয় না সাইফুল। বউয়ের কাপড়চোপড় তেল সাবান দিতেও কার্পণ্য তার। টাকা জমিয়ে জমি বন্ধক নেওয়ার ধান্দা সাইফুলের। বৃহস্পতিবার (২৬ মে) জামিন নিতে বেশ কিছু টাকা নিয়ে আসে সাইফুল। এর মাঝে আদালত বিষয়টি বুঝতে পেরে শুনানির এক পর্যায়ে তাকে টাকাগুলো বের করতে বলেন। এবং প্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড় কেনাকাটার জন্য সব টাকা তুলে দেওয়া হয় আসমার হাতে। পুরো দুই ঘন্টা সময় দেয়া হয় বাজার করার জন্য। এর মাঝে আসমা কে সাথে নিয়ে সাইফুল বাজারে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর বাজার থেকে ফিরে আসে তারা। মোটামুটি সাড়ে তিন হাজার টাকার (প্যারাসুট নারিকেল তেল, তিব্বত টেলকম পাউডার, ফেয়ার এন্ড লাভলী ক্রিম, হাতের চুড়ি, থ্রি পিস, সাবান, জুতা, বাচ্চাদের জন্য জামা ইত্যাদি) বাজার করে আসমা। পরে আদালতেই স্ট্যাম্পে লিখিত অঙ্গীকারনামায় সাইফুল বলে আর কখনো স্ত্রীকে কষ্ট দিবেনা, কিপটামোও করবে না কখনো। শেষে আসমা সাইফুলের হাত ধরে। তিন সন্তান আর স্বামীকে নিয়ে ফিরে যায় বাড়িতে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) আসমার বিষয়টি নিয়ে বিচারক মতিউর রহমান তুলে ধরলে এক ভিন্ন সমাধানে সকলের বাহবাহ পান তিনি।

[wps_visitor_counter]