রিয়াদখাঁন হত্যার ৯মাস পরেও গ্রেফতার হয়নি আসামিরা

প্রকাশিত : আগস্ট ২০, ২০২২ , ১১:০৫ অপরাহ্ণ

হেলালী ফেরদৌসী, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন:ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুরের বলাবাড়িয়া সাইনবোর্ড এলাকার সলেমান খাঁনের ছেলে রিয়াদখাঁন হত্যাকাণ্ডের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও হত্যার মূল আসামিরা রয়েছে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। মামলার ৯মাস পেরিয়ে গেলেও মূল আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত নিহতের পরিবার। এতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন বলে জানিয়েছেন নিহত রিয়াদ খাঁনের পরিবারের লোকজন।সে সময় রিয়াদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোটচাঁদপুর জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নয় মাস অতিবাহিত হলেও কিন্তু রিয়াদ হত্যা মামলা তদন্তাধীন থাকলেও তেমন কোন অগ্রগতি নেই বলে নিহতের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন। গত ২১ডিসেম্বর ২০২১ রাত সাড়ে নয়টার দিকে বলাবাড়িয়া সাইনর্বোড বাজার এলাকা থেকে রিয়াদখাঁনকে আসামী মিলন মোবাইলে ডেকে নিয়ে যায় কপোতাক্ষ নদীর পাশে বাগডাঙ্গা মনিরুজ্জামান ঝিনু মিয়ার আমবাগানের পশ্চিম পাশে ডেকে নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র-গাছি দা দ্বারা নিহত রিয়াদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি একাধিক কোপাইয়ে নৃশংসভাবে এবং মৃত নিশ্চিত করার জন্য জবাই করে হত্যা করে দুষ্কৃতিকারী সন্ত্রাসীরা।লাশটি গুম করার জন্য ঘটনাস্থলের পাশে কপোতাক্ষ নদীর পানিতে ডুবিয়ে রাখে। এ ঘটনায় রিয়াদখাঁনের বাবা সলেমান খাঁন বাদী হয়ে ঘটনার পর দিন অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারীদের আসামি করে কোটচাঁদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ বলাবাড়িয়া গ্রামের মৃত পিকুল কুমার দাসের ছেলে মিলন কুমার দাস(২১)কে গ্রেফতার করে জেল-হাজতে পাঠায়।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা ও একজন আসামী গ্রেফতার হলেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল আসামীরা রয়েছে আড়ালে,আটকও হয়নি সে সব খুনিরা। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি ও পুলিশের গড়িমসিতে এমন হয়েছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। শুধু তাই নয়, এ নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনায় মূল আসামীদের ব্যতিরেকে একজনের আসামী করার ব্যাপারে খোদ কোটচাঁদপুর থানা পুলিশের দিকেই আঙুল তুলেছেন নিহতের স্বজনরা। নিহত রিয়াদের বৃদ্ধ বাবা সলেমান খাঁন বলেন, বৃদ্ধ অবস্থায় এসে ছেলের রক্তাক্ত লাশ দেখতে হবে ভাবিনি।আমার ছেলে হত্যার পর কোটচাঁদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করি।ওই মামলায় একজন গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছে। এছাড়া মূল আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। মূল আসামিসহ অন্য আসামিদের গ্রেফতার করে ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য জোর দাবি জানান তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ছেলে রিয়াদকে আর ফিরে পাব না জানি। তবে মরার আগে মূল হত্যাকারীদের সবার বিচার যেন দেখতে পাই। রিয়াদের বড় ভাই রবিউল ইসলাম বলেন, আসামী মিলন দাস একা ধারালো অস্ত্র গাছী দা দিয়ে প্রায় ২৩টির অধিক কোপের দাগ,ডান হাতের কব্জি কেটে নেয়া,সর্বোপরি গলা কেটে জবাই করে নৃশংসভাবে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। ভাবতেই গা-শিউরে ওঠে। এ হত্যাকাণ্ড মিলন দাসের একার পক্ষে সম্ভব নয়।জেলে থেকে মিলন দাস বিভিন্ন মাধ্যমে শিকার করেছে,প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সহ কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ তাকে যা যা বলতে বলেছে,৬৪ধারায় জবানবন্দিতে খুনের দায় একা স্বীকার করে নিলে প্রভাবশালীরা মিলনকে জামিনে সাড়িয়ে আনবেন,তার কিছুই হবে না। রিয়াদ হত্যার ঘটনায় মিলনকে আটক করা হয়। অথচ বলাবাড়িয়ার সামছুর রহমানের ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম ও মোঃ রাজু আহমেদ,মৃত: শাহাদত হোসেনের ছেলে মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন ও মোঃ শাহাবুর রহমান, কোমরপুর এলাকার ইদবার আলীর ছেলে আলম কাজী,গলাবাড়িয়া এলাকার মোতালেব খাঁনের ছেলে মিজান খাঁন,সরূপপুরের মনিরুল নিকেরী মামলার অন্যতম ও প্রধান আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে আড়ালে অধরাই। আমার ভাইয়ের মোবাইল কললিস্টে মিলন দাসসহ আরও ৭/৮ জনের নাম ছিল তারাসহ যারা ডেকে নিয়েছে তারাই হত্যা করেছে। এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।খুনিরা আমাকেও মেওে ফেলার হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।ভয় ও উৎকণ্ঠায় দিন পার করছি আমি ও আমার পরিবার। রিয়াদকে খুন করলো। এটা মেনে নিতে পারছি না। আমার ভাইকে আর ফিরে পাব না। এভাবে আর কোনও মায়ের বুক যাতে খালি না হয়”,যোগ করেন রিয়াদের বড় ভাই রবিউল। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই। অন্তত খুনিদের শাস্তি হলে মনকে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দিতে পারব।
কোটচাঁদপুরের এলাঙ্গী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খানঁ,বলাবাড়িয়া গ্রামের ও চৌগাছা পৌর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর বিশ্বাস মোঃ আলমগীর বিশ্বাস,৫নং এলাঙ্গী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের তিনবারের নির্বাচিত মেম্বর মোঃ এনামুল হক,পাসপাতিলা গ্রামের ৯নং ওয়ার্ডের মৃত নবাব আলীর ছেলে জেলে থাকার পর স¤প্রতি জামিনে ছাড়া পেয়েছেন মোঃ শাহজাহান আলীসহ স্থানীয়রা জানান,ধৃত আসামী মিলন কুমার দাস রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। ধারালো অস্ত্র গাছী দা দিয়ে একের অধিক কুপিয়েছে খুনিরা,ডান হাতের কব্জি কেটে নেয়া হয়েছে তারপর গলা কেটে জবাই করে নৃশংসভাবে হত্যা করা কি একার পক্ষে আদৌ সম্ভব?যে বা যারায় রিয়াদকে হত্যা করেছে,পুলিশের নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সকল খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কোটচাঁদপুর সার্কেল) মোঃ মোহাইমিনুল ইসলাম এর নিকট রিয়াদ হত্যা মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অসুস্থ আছেন বলে জানান। আলোচিত এ মামলার ব্যাপারে কোটচাঁদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মঈন উদ্দিন বলেন, রিয়াদ হত্যা-রহস্য উদঘাটনের জন্য জব্দ-কৃত আলামত রক্তমাখা জামা-কাপড় ডি.এন.এ টেস্টেও জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।রিপোর্ট আশার পর হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা পাওয়া যাবে।
রিয়াদের হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোটচাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসানুর রহমান বলেন, মামলার অন্যতম আসামি মিলন দাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কোটচাঁদপুর সার্কেল জনাব মোঃ মোহাইমিনুল ইসলাম স্যার সহ ওসি স্যার নিজে তদারকি করছেন বলে জানান তিনি।

[wps_visitor_counter]