কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল রিপোর্ট বদলে দেবার অভিযোগ

প্রকাশিত : আগস্ট ২৯, ২০২২ , ৯:১৫ অপরাহ্ণ

হেলালী ফেরদৌসী, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে অপরাধীকে বাঁচাতে গলার হাড় ভাঙ্গা রিপোর্টের পরিবর্তনে সামান্য মারধর করার ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী গণমাধ্যম কর্মী বেলাল হুসাইন বিজয় অভিযোগ করেছেন যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মেডিকেল রিপোর্টের পরিবর্তে আসামিদের কাছ থেকে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে দায় সারা মেডিকেল রিপোর্ট দিয়েছেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ডাঃ কৃষ্ণ গোপাল বিশ্বাস ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাজহারুল ইসলাম। বিস্তর অভিযোগে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী দৈনিক ভোরের কাগজ ও স্থানীয় দৈনিক নওয়াপাড়া পত্রিকার সাংবাদিক বেলাল হুসাইন বিজয় গত ২৮ জুলাই তারিখ সন্ধ্যায় কালীগঞ্জ উপজেলার রাখালগাছী ইউনিয়নের বাজে কুল্লাপাড়া গ্রামে যান সংবাদ সংগ্রহ করতে। সংবাদ সংগ্রহের এক পর্যায়ে স্থানীয় সন্ত্রাসী সায়ামন, সাইদুল, শরিফুল, জাইবারসহ আরও অজ্ঞাত ৩/৪ জন সাংবাদিক বেলাল হুসাইন বিজয়কে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ ও অতর্কিত আক্রমণ করে। তাকে লোহার রড,হাতুড়ি ও দেশিয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এসময় তার আত্ম চিতকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে বিজয়কে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা বেগতিক দেখে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরে সাংবাদিক বেলাল হুসাইন বিজয়ের স্বজনরা রাত ১১টায় যশোর ২৫০শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সাংবাদিক বেলাল হুসাইন বিজয় যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেন। প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে হামলার এই বিষয়ে থানায় পরদিন একটি মামলা রেকর্ড করেন মামলা নং-১৪৮। দীর্ঘ চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জানতে পারেন, কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তার আঘাতের যে সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছে সেখানে গলার হাড় ভাঙ্গার কথা উল্লেখ নেই। এমনকি রিপোর্টে গিভিয়াস এর কথা উল্লেখ না করে উল্লেখ করা হয়েছে সামান্য কিল-ঘুষি। যা তার শরীরের আঘাতের সাথে হাসপাতালের রিপোর্টের কোনও মিল নেই। প্রশ্ন থাকে যদি সামান্য কিল ঘুষির ঘটনা হয়ে থাকে তাহলে কোনও তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার্ড করা হলো? অভিযোগ রয়েছে অর্থের বিনিময়ে এসব ভুয়া ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত মেডিকেল রিপোর্ট দিয়েছেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর মেডিকেল অফিসার ডা. কৃষ্ণ গোপাল বিশ্বাস ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাজহারুল ইসলাম। অসঙ্গতি সার্টিফিকেট সংশোধনের আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি ও অশোভন আচরণের অভিযোগও উঠেছে উপজেলা আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী বেলাল হুসাইন বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ডাক্তার কৃষ্ণ গোপাল বিশ্বাস এবং আবাসিক মেডিকেল অফিসার অপরাধীদের সাথে যোগসাজশে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আঘাতের যথাযথ মেডিকেল সার্টিফিকেট দেননি। বরং মেডিকেল সার্টিফিকেটে হাড় ভাঙ্গার পরিবর্তে সামান্য কিল-ঘুষি আঘাত দেখিয়ে সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন। যাতে করে অভিযুক্তরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারেন। তিনি বলেন, আমার শরীরের আঘাতের সাথে হাসপাতাল থেকে দেয়া সার্টিফিকেটের বাস্তবে কোনও মিল নেই। গত ২২ আগস্ট এই অসঙ্গতিপূর্ণ সার্টিফিকেট সংশোধনে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আলমগীর কবিরের দ্বারস্থ হলে তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, প্রদান-কৃত সার্টিফিকেটের মূল-কপি নিয়ে এলে সংশোধন করে দেবেন। পরবর্তীতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ কৃষ্ণ গোপন বিশ্বাসের সাথে কথা বললে তা সংশোধনে অস্বীকৃতি জানান তিনি। শুধু তাই নয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাজহারুল ইসলামকে ডেকে নিয়ে এসে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাজহারুল ইসলাম প্রথমে বলেন যশোর হাসপাতালের ছাড়পত্রে একাধিক ব্যক্তির হাতের লেখা আছে ও এক্সরে রিপোর্টের কোড নাম্বারের সাথে ডাক্তারের রিপোর্টের কোডের কোন মিল নেই। পরে ডাক্তারদের সাথে চ্যালেঞ্জ করলে আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাজহারুল ইসলাম স্বীকার করে বলেন, আমাদের রিপোর্ট দেখার ভুল ছিলো।
সার্টিফিকেটে অসঙ্গতি ও রেফার্ডের বিষয় জানতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ কৃষ্ণ গোপাল বিশ্বাস জানান, থানা থেকে যখন আমার কাছে মেডিকেল রিপোর্ট চাই তখন আমি তড়িঘড়ি করে রিপোর্টটি পাঠিয়ে দিই। রুগীর যে মোবাইল নাম্বার ছিলো সেটাতে কল করেছিলাম সেটি বন্ধ ছিলো তাই যোগাযোগ করতে পারিনি। ঘুষ বানিজ্যের মাধ্যমে ভুয়া রিপোর্ট দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাব তিনি হেসেই উড়িয়ে দিয়ে বলেন, আমার স্যারদের সাথে কথা বলেন। সামান্য মারধর ও কিল-ঘুষি যদি হবে তাহলে কেনও তাকে যশোর রেফার্ড করা হলো ? এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আলমগীর কবির বলেন, যদি হাড় ভেঙ্গে যায় ও গুরুত্বর জখম হয় সেক্ষেত্রে গিভিয়াস সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। আর যদি আবাসিক মেডিকেল অফিসার মাজহারুল ইসলাম আপনাদের সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করে থাকে তা হলে বিষয়টি আমি অবশ্যই দেখবো। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, এই বিষয়ে আমার কিছু জানা নাই। এক্সরে রিপোর্টে যদি হাড় ভাঙ্গা থাকে তাহলে অবশ্যই গিভিয়াস সার্টিফিকেট দিবে।

[wps_visitor_counter]