ময়মনসিংহ ব্যুরো, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: ময়মনসিংহে মেঘনা গ্রুপের ডিপোতে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনায় আন্তঃজেলা ডাকাতদলের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি ডাকাতদলের হেফাজত থেকে লুণ্ঠিত ৪ হাজার লিটার সয়াবিন তেল ও একটি ট্রাক উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, আবুল কালাম (৩০), জালাল হোসেন (৪৬), নজরুল ইসলাম (৩০), আবু সাঈদ ওরফে সৈকত (২৭), বাদল ওরফে আসলাম (২৮), মোঃ ইন্তাজ আলী (৩৫), রাকিব (২৮) ও ইউনুছ (৫৫)। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে চার ডাকাত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের প্রত্যেকের নামে চুরি, ডাকাতি, মাদকসহ পাঁচটির বেশি মামলা রয়েছে। মঙ্গলবার (০১ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঁঞা এ সব তথ্য জানান। পুলিশ সুপার আরও বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বেলতলী নামক এলাকায় মেঘনা গ্রুপের ডিপোতে ২২ সেপ্টেম্বর রাতে ২৫/৩০ জনের একটি ডাকাতদল কর্মচারী পরিচয়ে ওই ডিপোতে প্রবেশ করে পাহারাদের হাত পা বেধে রাত সাড়ে ৮ টা থেকে ৬ ঘন্টাব্যাপী ডাকাতি করে। ডাকাতদল মেঘনা গ্রুপের একটি ট্রাকে করে (কোম্পানির ট্রাক ভর্তি) ৮ হাজার ৩৮৮ লিটার সয়াবিন তেলের কার্টুন ও নগদ ২ লাখ ১১ হাজার টাকা, আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্রসহ ২৯ লাখ ২৬ হাজার ২৪৬ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় কোতোয়ালী মডেল থানায় (মামলা নং-১২/১০০০ তারিখ-২৩/০৯/২০১২ ইং ধারা- ৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড) মামলা করা হয়। পরবর্তীতে কোতোয়ালী মলে থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দের পরিকল্পনায় পুলিশ পরিদর্শক ফারুক হোসেনের নেতৃত্বে এসআই নিরুপম নাগ, মিনহাজ উদ্দিন, এএসআই সুজন চন্দ্র সাহা সহ একটি চৌকস ও শক্তিশালী টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত শুরু করে কয়েক-দফায় ৮ ডাকাতকে গ্রেফতার করে। এর মাঝে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভালুকার জামাল হোসেনকে জয়দেবপুর থেকে, নজরুল ও আবু সাঈদ সৈকত ওরফে শওকতকে জামালপুর থেকে, বাদল ওরফে আসলামকে বরিশাল থেকে, মোঃ ইন্তাজ আলীকে টঙ্গী থেকে, মোঃ রাকিবকে নীলফামারী ও মোঃ ইউনুছকে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে গ্রেফতার করে। এর মাঝে ইন্তাজ আলী, নজরুল ইসলাম, আবু সাঈদ সৈকত ওরফে শওকত ও বাদল ওরফে আসলাম ডাকাতির ঘটনায় নিজেদের জড়িয়ে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য মতে মেঘনা গ্রুপের লুণ্ঠিত আলামত ১৩ লাখ টাকা মূল্যের ট্রাক ও একটি মোবাইল ফোন গাজীপুরের টঙ্গী থেকে উদ্ধার করার পর কোতোয়ালী পুলিশের চৌকস এই টিম টানা দু’দিনের অভিযানে সোমবার ডাকাতির ঘটনায় সম্পৃক্ত শরীয়তপুরের পালং থানা এলাকার আবুল কালামকে গ্রেফতার করলে তার দেখানো মতে চার হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। এর আগে অন্যদের গ্রেফতার করে লুণ্ঠিত ট্রাকসহ ২০ লাখ ৩০ হাজার টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সুপার আরও বলেন, এই ডাকাতদলের সর্দার জয়নাল। এই ডাকাতদলে ২৫/৩০ জনের সদস্য রয়েছে। যাদের বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়। বিভিন্ন অপরাধে জেলখানায় থাকাকালে তাদের পরিচয় ঘটে। পরবর্তীতে জামিনে এসে সবাই গাজীপুরে কাছাকাছি বসবাস শুরু করে এবং একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। পুলিশ সুপার গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের বরাত দিয়ে আরো বলেন, ডাকতদলের এ সব সদস্য দিনে পিক-আপ চালানোসহ নানা পেশায় জড়িত থাকলেও তাদের দলনেতা জয়নালের নেতৃত্বে বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি, দুঃসাহসিক চুরিসহ নানা ধরনের অপরাধ করে আসছে। কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ এ ব্যাপারে বলেন, ডাকাতদলের সর্দার জয়নালসহ অন্যান্যদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। এদের মাঝে অনেকেই পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে। পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। তিনি আশা করছেন অল্প সময়ের মধ্যে আরো কয়েকজনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার) খন্দকার ফজলে রাব্বি, রায়হানুল ইসলাম, ফালগ্নুনী নন্দী, শাহীনুল ইসলাম ফকির ও কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।