স্যান্ডেল পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় ক্লাসে বসে থাকা দায়

প্রকাশিত : জুন ১১, ২০২২ , ৬:০৯ অপরাহ্ণ

মোঃ আশরাফুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন:স্কুল ভবনের পাশে পুরাতন ও পরিত্যক্ত স্যান্ডেল পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের দিয়াড় পশ্চিম জাহাঙ্গীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা দূষণের শিকার হচ্ছেন। উজিরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ উজিরপুর নাসির মন্ডলের টোলা গ্রামে এই স্কুলের অবস্থান। পিচ গলানোর সাথে পাথর ও পিচের মিশ্রণ করানোর মেশিনের শব্দে শিক্ষকের পাঠদান বুঝতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। পদ্মা নদী রক্ষা বাঁধের সড়কে চলছে পিচ কার্পেটিংয়ের কাজ। সংস্কারকাজের জন্য বিদ্যালয়ের পেছনেই গত ৭ দিন ধরে পিচ গলাতে জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে পুরাতন স্যান্ডেল। এতে কালো ধোঁয়ায় ক্লাসে বসা শিক্ষার্থীরা দূষণের শিকার হচ্ছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ ঘেঁষে মেশিনে পিচ ও পাথরের মিশ্রণ করার কারণে ধুলাবালি ও শব্দে অতিষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্যান্ডেল পোড়ানোর কালো বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসের তোড়ে গিয়ে ঢুকছে শ্রেণীকক্ষগুলোতে। সেখানে কথা হয় শিক্ষার্থীদের সাথে। তারা জানায়, কালো ধোঁয়ায় তাদের চোখ জ্বালা করে। দম বন্ধ হয়ে আসে। বমি বমি ভাব হয়। টিনের অস্থায়ী শ্রেণীকক্ষ হওয়ায় কালো ধোঁয়া বা শব্দ কোনটাই আটকানো যায় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এখন নিয়মিত ক্লাস চলছে। এর মধ্যে কালো ধোঁয়া যখন ঢুকছে, তখন লেখা বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীরা হাত দিয়ে নাক-মুখ চেপে ধরছে। দিয়াড় পশ্চিম জাহাঙ্গীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোসা. সেলি খাতুন ও মোসা. মমতাজ খাতুন জানান, গত ৭-৮ দিন থেকে হঠাৎ করেই স্কুলের গা ঘেঁষে পিচ গলাতে স্যান্ডেল পোড়ানো ও পিচ-পাথর মেশানো শুরু হয়েছে। প্রচুর পরিমাণে গন্ধ আসে। ক্লাসের শিক্ষার্থীদের খুব কষ্ট হয়। এরই মাঝে বাধ্য হয়েই ক্লাস করতে হচ্ছে। চতুর্থ শ্রেণীর শামীম, পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মরিয়ম, সিমা খাতুন বলেন, ক্লাস করা অবস্থাতেই চোখেমুখে মেশিনের ধুলাবালি আসে। কালো ধোঁয়া নাকের কাছে আসলে বমি বমি ভাব হয়। ম্যাডামদের বারবার বলেও কোন লাভ হয় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক জানান, শিবগঞ্জ উপজেলার ছত্রাজিতপুর থেকে এসব রাবারের পুরাতন ও পরিত্যক্ত স্যান্ডেল কিনে এনে পুড়ানো হয়। কেজি প্রতি ১১ টাকা করে এসব স্যান্ডেল কেনা হয়েছে। বেশি সময় ধরে জ্বলে বলে মালিকরা এসব পুড়চ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি আশেপাশের এলাকার আমের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে স্যান্ডেল পোড়ানোর ধোঁয়াতে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এই এলাকার প্রধান অর্থকরী ফল আম। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমচাষীরা। কারন যে আমে ধোঁয়া লাগে, সেসব আম স্বাভাবিক মিষ্টতা ও আমের গায়ের রং নষ্ট হয়। এতে আমের দাম পাওয়া যায় না। স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম জানান, আমরা এর আগে দেখেছি পিচ গলাতে জ্বালানি হিসেবে কাঠ ও জুট ব্যবহার করতে। কিন্তু স্কুল ও আবাসিক এলাকায় এভাবে রাবারের স্যান্ডেল ব্যবহার করতে প্রথম দেখছি। মানুষের স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি বিবেচনায় প্রশাসনকে স্যান্ডেল পুড়ানোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করছি।
দিয়াড় পশ্চিম জাহাঙ্গীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন বলেন, পিচ গলানো ও মেশিনে পাথর মিশ্রণের কাজ শুরুর কয়েকদিন আগে ঠিকাদারের লোকজন এসেছিল আমার কাছে। তারা আমাদের স্কুলের পাশের জায়গায় কাজ করবে, এর বিনিময়ে স্কুলের ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা করার জন্য একটি দোলনা কেনা বাবদ ১৫ হাজার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাই আর কোন প্রতিবাদ করা হয়নি। ঠিকাদার খাইরুল কবির রানা মুঠোফোনে জানান, উন্নয়ন কাজ করতে গেলে একটু অসুবিধা হবেই। তাই এই সাময়িক অসুবিধার বিষয়টি মেনে নিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে হবে। তবে জ্বালানি হিসেবে পুরাতন রাবারের স্যান্ডেল ব্যবহার নিয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি তিনি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোজাহার আলী বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটিয়ে এসব কাজ করা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও পিচ গলাতে জ্বালানি হিসেবে কাঠ বা কাপড়ের জুট ছাড়া স্যান্ডেল ব্যবহার করার কোন নিয়ম নেই।
উল্লেখ্য, শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত দিয়াড় পশ্চিম জাহাঙ্গীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২০ জন এবং শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন।

[wps_visitor_counter]