শৈলকূপায় এমপিওভুক্ত স্কুলে শিক্ষক নেই: ক্লাস নিচ্ছেন নাইট গার্ড আর দপ্তরি

প্রকাশিত : আগস্ট ২৮, ২০২২ , ৮:০৩ অপরাহ্ণ

হেলালী ফেরদৌসী, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার একটি নতুন এমপিওভুক্ত নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কোনও শিক্ষক নেই। আর শিক্ষক হিসেবে যারা আছেন তাদের নিয়োগপত্র বা একাডেমিক সনদ নেই, নেই নিবন্ধন। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন বিদ্যালয়ের নাইট গার্ড, আয়া ও দপ্তরি। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সঙ্গে দিনের পর দিন কমছে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। অভিযোগ উঠেছে, নিয়োগ বাণিজ্য করার জন্য প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকদের তাড়িয়ে দিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক নাইট গার্ড দিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন। সূত্রে জানা গেছে,২০১২ সালে শৈলকূপা উপজেলার ১২নং নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের নিত্যানন্দপুর গ্রামে হাজী মো: শামসুদ্দিন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকে শিক্ষক আসাদুজ্জামান, নাসিরুল ইসলাম, আমির হামজা, রচনা খাতুনসহ কয়েকজন শিক্ষক ছাত্র ছাত্রীদের বিনা বেতনে নিয়মিত পাঠদান করাতেন। প্রতিষ্ঠা কালীন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম চাকরী ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমান বিদ্যালয় এমপিও ভুক্তি হওয়ায় সভাপতি সাহাবুল ইসলাম সাবু ও বর্তমান প্রধান শিক্ষক রনজিৎ কুমার বিশ্বাস প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকদের সরিয়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগের জন্য শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে শিক্ষক চাহিদা পাঠিয়েছেন। সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষক না থাকায় স্কুলে উপস্থিতি একেবারেই কম শ্রেণী ভেদে ক্লাসে ৮ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ঠিকমতো ক্লাস চলছে না। ৮ম শ্রেণীতে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ের নাইট গার্ড আবু আহম্মেদ ক্লাস নিচ্ছেন। এই নতুন এমপিওভুক্ত নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষক নেই।শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন বিদ্যালয়ের নাইট গার্ড, আয়া ও দপ্তরি। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই কম। আর শিক্ষক হিসেবে যারা আছেন তাদের নিয়োগপত্র বা অ্যাকাডেমিক সনদ নেই বলে তারা জানান। ১০ম শ্রেণীর এক ছাত্র বলেন, আগে যেসব শিক্ষক ছিল তাদের আসতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের সামনে পরীক্ষা আর ক্লাস নিচ্ছেন স্কুলের নাইট গার্ড রাশিদুল, দপ্তরি গোপাল ও আয়া নাসিমা আক্তার আদুরি। তারা নিজেরাই লেখাপড়া ভাল জানে না তাই আমাদের কি শেখাবে। সাথী খাতুন নামের এক ছাত্রী জানায়, আগে যেখানে আমাদের ক্লাসে ৩০/৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী আসত। এখন সেখানে ১০/১২ জনও আসছে না। আমাদের আগের স্যাররা অনেক ভালো পড়াতেন। আমরা আগের স্যারদের শিক্ষক হিসাবে পেতে চাই। শরিফুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, যারা বিনা বেতনে শিক্ষাদান করে বিদ্যালয়টি এ পর্যায়ে এনেছেন, তাদের অবদানকে বাদ দিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি সাবু নিয়োগ বাণিজ্য করার জন্য যে বুদ্ধি এটেছে তা ঠিক না। বিদ্যালয়ের শিক্ষক আসাদুজ্জামান, আমির হামজা বলেন, খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করলাম। আজ আমাদের কোন মূল্যায়ন নেই। বিদ্যালয়টিতে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মোটা অংকের টাকা হাতানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। এব্যাপারে প্রধান শিক্ষক রনজিৎ বলেন,শিক্ষক ছাড়া এভাবে ক্লাস নেয়া ঠিক না তারপরেও শিক্ষক স্বল্পতার কারণে ছাত্রছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। বর্তমান নিয়মানুযায়ী আগের শিক্ষকদের নিবন্ধন না থাকায় তারা স্কুলে শিক্ষকতা করতে পারবে না বিধায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষক এসে গেলে শিক্ষকরাই ক্লাস নিবে এমনভাবে আর ক্লাস নেয়া হবে না। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের সভাপতি সাহাবুল ইসলাম সাবু বলেন, শিক্ষক না থাকায় এভাবে কিছুদিনের জন্য তাদেরকে ক্লাস নিতে বলেছি। বিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ হলে এ-সমস্যা কেটে যাবে। জেলা শিক্ষা অফিসার শেখ মনিরুল ইসলাম ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামীম আহাম্মেদ খান বলেন বলেন, শিক্ষক স্বল্পতার কারণে এমন সমস্যা হতে পারে। ২০০৫ সালের পর নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের নিবন্ধন থাকতে হবে। ওই স্কুলের অনেক শিক্ষকের সনদ ও নিয়োগপত্র নেই। আমরা প্রাপ্ত চাহিদা ঢাকায় পাঠিয়েছি, বিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী এনটিআরসি বরাবর শিক্ষক চাইলে সে মোতাবেক নিয়মানুযায়ী খুব শীঘ্রই শিক্ষক নিয়োগ হয়ে যাবে।

[wps_visitor_counter]