ষড়যন্ত্রই আমাদের মুখ্য পরিকল্পনা

প্রকাশিত : নভেম্বর ২৮, ২০২৩ , ৯:০১ অপরাহ্ণ

কাউকে ছোট ছোট ভালো কাজ করতে দেখলে আমরা উৎসাহিত হই। প্রশংসা করি। অনুপ্রাণিত হই এবং অনুপ্রেরণা দেই। কেউ একটু সদাচরণ করলে, শ্রদ্ধা-সম্মান দেখালে, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে, সম্পর্কের যত্ন করলে, মিথ্যা না বললে আমরা খুশি হই। অতি অল্পতেই আমাদের সন্তুষ্ট হওয়ার কথা ছিল না! আশরাফুল মখলুকাত হিসেবে আমাদের আরও ভালো ভালো কাজ করা উচিত ছিল। সে কাজগুলো কোন চাপে নয়, শাস্তির ভয়ে নয় বরং স্ব-প্রণোদিত বিবেকের তাড়না থেকে ভালোর সাথে আলো ছড়ানো দায়িত্ব ছিল। আমাদের মন্দ কাজে যত প্রচেষ্টা ভালো কাজে ততোটা আগ্রহ নাই! আমরা ঘুষকে বৈধ করার যুক্তি খুঁজি, দায়িত্ব এড়ানোর মওকা খুঁজি। গরীবকে আরও গরীব করতে, মাজলুমকে আরও চেপে রাখতে, নীতিবানকে বিপদে ফেলতে, সহজ-সরলকে ভোগান্তিতে জড়াতে কৌশল করি! ষড়যন্ত্রই আমাদের মুখ্য পরিকল্পনা! যে অসহায়কে সাহায্য করে তাকে বাধাগ্রস্ত করি। কারো কর্মতৎপরতাকে দমিয়ে দিতে আয়োজন করি। প্রশংসার নামে নিন্দা করি! পাছে বলে ভেতরের দুর্গন্ধ ব্যবহার করি!
আমাদের যা প্রচেষ্টা তা স্বার্থ হাসিলের। আমাদের যা উদ্যোগ তা অন্যকে ঠকাতে। আমরা কখনোই নিজেকে পরাজয়ের পজিশনে দেখতে চাই না। অথচ নিজেকে ঠকিয়ে হলেও অন্যকে না ঠকানো আদর্শ হলে মানুষ হিসেবে বড় হওয়া যেত! অপরের স্বার্থকে হেয় করে নিজের স্বার্থে উঁচু করে ধরা আমাদের জাতীয় চরিত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেজন্য আমরা ভালো কাজের মোটিভেশন শুনে আপ্লুত হই, কাউকে ভালো কিছু করতে দেখলে পর্যবেক্ষণ করি কিন্তু নিজেদের কাজে, আচরণ ও বিশ্বাসে ভালোর আলোকে নিভিয়ে রেখেছি। নিজের অপরাধ দিয়ে অন্যের পাপ মাপি। বর্তমান সমাজ-চিত্রে ভালো কাজ ব্যতিক্রমী হিসেবে উপস্থাপিত হয়! ঘুষকে অপরাধ মনে করা হচ্ছে না, দুর্নীতির অর্থ দ্বারা আয়ের হিসাব করা হয়, পেশাদারিত্বে অনাচার ঢুকেছে, খাদ্যে ভেজাল মেশানো নেশায় পরিণত হয়েছে। শর্ট কার্টে বড় লোক হতে গিয়ে মানবপ্রকৃতি ও প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখে ঠেলছি। মিথ্যাচারের কারসাজিতে সত্যের বাতি নিভিয়ে রাখার চেষ্টা বহাল তবিয়তে। সুতরাং একটু ভালো দেখলেই, একটু নিরাপত্তা পেলেই, একজন দায়িত্বশীল এলেই তাকে সেলিব্রেটি বানিয়ে দিচ্ছি। অথচ ওটাই সকলের রুটিন ওয়ার্ক ছিল! আদেশ রক্ষার চেয়ে ভাঙছে বৃহৎ জনে! মিথ্যার মিছিলে যোগ দিয়েছে সমাজস্থদের দলে দলে! কুশীলবের চিহ্ন রাখছে পালে পালে!
আর কিছুদিন বাদে একটা সত্য শুনলে আশ্চর্য হবো! কাউকে দান-সদকা করতে দেখলে বিস্মিত হবো! সদাচার যেভাবে হারছে তাতে বিস্ময় প্রকাশের বিস্ময়ে আমাদেরকে কাহিল হতে হবে! কেউ নীতিবান থাকলে, কেউ সুপথে চললে আশ্চর্য জীব হিসেবে তাকে দেখিয়ে দেয়া হবে! তেমন প্রজন্ম সামনে হাতছানি দিচ্ছে! জীবনের শুদ্ধাচার কাগজের অক্ষরে বন্দী হয়েছে! আমরা বই থেকে খুব কম শিখছি ।পালন করছি তারও কম!যা সামনে-দেখছি তাই অনুকরণ করছি!
দুর্বলকে থাপড়ানো যায়, ক্লাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের বাসায় যেতে বাধ্য করা যায়, ফাইল আটকিয়ে রাখা যায়! দেশের টাকা সীমান্তের ওপারে পাড়ি দিতে পারে! বড় বড় অপরাধ করেও অবাধে ঘুরতে পারে আব্র ছোট অপরাধ করে কিংবা নিরপরাধ থেকেও সাজা খাটতে হতে পারে! সমাজ আমাদেরকে যা শেখাচ্ছে -তাই শিখছি! সমাজ কি? এইতো আমরা! আমাদের চিন্তা-ভাবনা, কর্মকাণ্ডের সমষ্টি। বদলাতে হবে, বদলাতে হবে! নয়তে ধ্বংস হব! বংশ নির্বংশ হবে আসল মানুষদের!
রাজু আহমেদ।
কলামিস্ট।
[email protected]

[wps_visitor_counter]