শরীয়তপুরে সড়ক ব্যবস্থাপনায় আসছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন: এনামুল হক শামীম

প্রকাশিত : জুন ২৮, ২০২২ , ১০:২৬ অপরাহ্ণ

পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, সংগৃহীত চিত্র।

ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেছেন; স্বপ্নের পদ্মা সেতুর স্বাগতিক জেলা হিসেবে সবচেয়ে সুবিধাভোগী হবার কথা শরীয়তপুরের। কিন্তু সরু আর ভাঙা সড়কের কারণে সেতু উদ্বোধন হলেও কাঙ্ক্ষিত সুবিধা পাচ্ছে না জেলাটির মানুষ। তবে বিষয়টি নিয়ে বসে নেই সড়ক ব্যবস্থাপনায় জড়িতরা। দেরিতে হলেও শরীয়তপুরের সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। গোটা শরীয়তপুর জুড়েই চলছে উন্নয়ন-যজ্ঞ। পদ্মা সেতুর নাওডোবা অ্যাপ্রোচ সড়ক হতে শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত চার লেনের সংযোগ সড়ক প্রকল্পের অংশ হিসেবে আপাতত দ্রুত গতিতে ৩৪ মিটার প্রস্তের দুই লেনের সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে সেটি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছে শরীয়তপুর সওজ। সড়কটি নির্মাণ হলে জন-ভোগান্তি অনেকাংশে কমে আসবে। অন্যদিকে, শরীয়তপুর থেকে (মনোহরবাজার) নরসিংহপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত নির্মাণাধীন ৩১ কিলোমিটার চার লেনের সড়ক পাল্টে যেতে শুরু করেছে গোটা জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা।
গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করার পর শরীয়তপুর জেলার সংযোগ সড়ক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ থেকে কাজীরহাট পর্যন্ত সড়কটি সরু ও গর্ত থাকায় যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সড়কটি দ্রুত সময়ের মধ্যে যান চলাচলের উপযোগী করার দাবি করেছে জনসাধারণ। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পটি মুল নির্মাণ কাজ ২০১৪ সালে শুরু হলেও কেন শরীয়তপুরের সংযোগ সড়কটি এতো দিনে হয়নি। সেতুর হবার পরে কেন কাজ হচ্ছে। এক্ষেত্রে তৎকালীন জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতা দায়ী করছেন অনেকে। জানা যায়, পদ্মা সেতুর স্বাগতিক জেলা হলেও উদ্যোগের ফলে সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছিল শরীয়তপুর। পদ্মা সেতু প্রকল্প শেষ হয়ে আসলেও সংযোগ সড়কের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মন্ত্রিপরিষদ সদস্য হন শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য একেএম এনামুল হক শামীম। পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাসের মাথায় ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ সংযোগ সড়কের কারণে পিছিয়ে থাকার কথা উল্লেখ শরীয়তপুর জেলা সদর পর্যন্ত চার লেনের সড়ক করার জন্য সড়ক ও সেতু বিভাগ সচিবকে চাহিদাপত্র (ডিও লেটার, যার নং-৪২.০০.০০০০.০০৪.১৮.০০১.১৯-১২২) দেন তিনি। এরপর ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর ৪২.০০.০০০০.০০৪.১৮.০০১.২০-২৮৩ স্মারকে এবং ১৭ ডিসেম্বর ৪২.০০.০০০০.০০৪.১৮.০০১.২০-৩৭০ স্মারকে আরও দুটি ডিও লেটার দিয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দেন উপমন্ত্রী। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন থেকেই যেন শরীয়তপুর জেলার মানুষ সেতুর সুবিধা ভোগ করতে পারেন এজন্য সংযোগ সড়কটি দ্রুত বাস্তবায়নের অনুরোধ করেন তিনি। এছাড়া শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন এমপিও ডিও লেটার দিয়েছেন। এরপর ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় ১ হাজার ৬শ ৮২ কোটি টাকার ব্যয়ে শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা (পদ্মা সেতু অ্যাপ্রোচ) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্র মতে, শরীয়তপুর থেকে নরসিংহপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার এবং পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ থেকে শরীয়তপুর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার চার লেনে দুটি সড়ক দুই হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। মনোহর বাজার হতে নরসিংহপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়কটি দ্রুত গতিতে এগিয়ে আনা হলেও জমি অধিগ্রহণ বিলম্বিত হওয়ায় পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কটি কিছুটা পিছিয়ে আছে। সওজ সূত্র আরও জানায়, চার লেন সড়ক বাস্তবায়ন দীর্ঘায়িত হওয়ায় পদ্মা সেতুর সুবিধা নিশ্চিতে সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নাওডোবা হতে শরীয়তপুর পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নে তিনটি গুচ্ছ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আপাতত দুই লেনের সড়ক হলেও পরবর্তীতে সেটি চার লেনে উন্নীত করা হবে। ৩টি গুচ্ছ প্রকল্পের মধ্যে- ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক হতে জাজিরা ডিগ্রি কলেজ পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার ৩৪ ফুট প্রশস্ত দুই লেনের সড়ক এবং শরীয়তপুর ফায়ার সার্ভিস অফিস হতে জাজিরা পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার পর্যন্ত ১৪২ কোটি টাকা দুই লেনের সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। যা পরবর্তীতে চার লেনে নেয়া হবে। এছাড়া কাজীর হাট বাজার ব্রিজ (১৫০ মিটার) ও প্রেমতলা কোটাপাড়া ব্রিজ (১৯০ মিটার) নির্মাণ করা হচ্ছে ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে। ইতোমধ্যে তিনটি প্রকল্পই টেন্ডার শেষ হয়ে নির্মাণ শুরু হয়েছে এবং ২০২৪ সালে মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছে সওজ। পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী শামীম বলেন, পদ্মা সেতুর চালুর সঙ্গে সঙ্গে শরীয়তপুরের মানুষ সড়কের সুফল না পাওয়ায় আমি ব্যক্তিগত ভাবে ব্যথিত। পদ্মা সেতুর প্রথম থেকে উদ্যোগ নিলে আগেই রাস্তা হয়ে যেত। আগে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমি উপ-মন্ত্রী হবার পরই বাকি দুই আসনের ইকবাল হোসেন অপু এবং নাহিম রাজ্জাককে নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করি। কোভিডের মধ্যেও টেন্ডার হয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে। আমরা দ্রুততার সাথে কাজ করছি, কাজ চলমান আছে, শরীয়তপুরবাসী সুফল পাবেন ইনশাল্লাহ। তিনি আরও বলেন, সাময়িক কষ্টের জন্য শরীয়তপুরের মানুষের কাছে আমি দু:খ প্রকাশ করছি। আস্থা রাখুন, কাজ দ্রুত শেষ হবে। নির্বিঘ্নে শরীয়তপুর যেতে পারবেন। ৩১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শরীয়তপুর-ইব্রাহিমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ১২ মার্চ একনেকে অনুমোদন হয়। এতে ব্যয় হবে ৮৫৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সড়ক দুটো নির্মাণ হলে শরীয়তপুর হতে ঢাকা, মংলা ও চট্রগ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা আসবে। শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজেদুর রহমান জানান, পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ থেকে শরীয়তপুর পর্যন্ত চার লেনে সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। আপাতত দুই লেনের সড়ক করা হচ্ছে। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে সড়কটি নির্মাণ হবে, পরবর্তীতে ৪ লেন হবে। সড়কটি নির্মাণ হলে যোগাযোগ আরো সহজ ও আরামদায়ক হবে।

[wps_visitor_counter]