গভীর রাতে নৌকার নির্বাচনী অফিসে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ

প্রকাশিত : জানুয়ারি ৩০, ২০২৩ , ৮:৫৪ অপরাহ্ণ

আশরাফুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের নৌকা প্রতীকের দুটি অফিসে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নৌকার প্রার্থী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বালুবাগান ও ০৩ নম্বর ওয়ার্ডের লাখেরাজপাড়ার নির্বাচনী অফিসে রবিবার (২৯ জানুয়ারি) দিনগত রাত ২টার দিকে এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। নোকার প্রার্থী, প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গভীর রাতে কে বা কারা হঠাৎ করে এই তিন অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের দাবি, আপেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটনের সমর্থকরা এই অগ্নিসংযোগ করেছেন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বালুবাগানের নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী অফিসের দায়িত্বে থাকা নৌকা প্রতীকের কর্মী আলহাজ্ব ইকবাল হোসেন ছুটকু বলেন, রাত ১ টার দিকে অফিস থেকে আমরা বাসায় চলে যায়। পরে রাত দেড়টা থেকে দুইটার দিকে আপেল প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে অফিসের বিভিন্ন আসবাবপত্র ও সরঞ্জাম আগুনে পুড়ে যায়। নৌকার বিজয় নিশ্চিত হওয়ার কারণেই এমন অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে, ০৩ নম্বর ওয়ার্ডের লাখরাজপাড়ার নির্বাচনী অফিসের কর্মী মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, হঠাৎ করেই রাত ২টার দিকে অফিসের পাশের ভবনের একজন লোক আমাকে ফোন দিয়ে জানায় অফিসে আগুন জ্বলছে। এসে দেখি কে বা কারা আগুন ধরিয়ে পালিয়ে গেছে। লাখেরাজপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা মাহবুব আলম রানা বলেন, নির্বাচনের ২-৩ দিন আগে নির্বাচনী অফিসে অগ্নিসংযোগের মতো এমন ঘটনা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়া ভালো লক্ষণ নয়। গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা চাই, সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আশা করি, খুব শীঘ্রই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ অভিযোগ করে বলেন, ভোটারদের সমর্থন ও সহানুভূতি পেতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটনের কর্মী-সমর্থকরা নিজেদের অফিসে ভাংচুর চালিয়েছে। নৌকার দুটি অফিসে অগ্নিসংযোগ ও কয়েকটি অফিসে ভাংচুরের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সদর থানায় দেয়া হয়েছে। অভিযোগ দেয়ার একদিন পরেই, তারা নিজেরাই নিজেদের অফিস ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। আশা করি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করলেই এর সঠিক বিষয় উদঘাটন হবে। এদিকে, নিজের ১১টি নির্বাচনী অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করেছেন আপেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সামিউল হক লিটন। তিনি বলেন, রবিবার (২৯ জানুয়ারি) রাত ৯টার পর থেকে আমার ১১টি নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করেছে। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন এটা করেছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে প্রত্যক্ষদর্শীরা ভাংচুর-কারীদের নাম বলেছে। আমি বিশ্বাস রাখতে চাই, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন জানান, নির্বাচনী অফিস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ পাওয়ার পরই জেলা-জুড়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর করা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস ভাংচুরের ঘটনায় খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়েছে। জেলা-জুড়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ আচরণবিধি তদারকি করতে মাঠে কাজ করছে। নির্বাচনে এরকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। সংসদীয় আসন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) থেকে বিএনপির সংসদ সদস্য হানুরুর রশীদ পদত্যাগ করায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ০৫ জানুয়ারি, বাছাই করা হয় ০৮ জানুয়ারি, প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৫ জানুয়ারি ও ১৬ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ হবে। আগামী ০১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইভিএমের মাধ্যমে ভোট-গ্রহণ করা হবে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের মোট ভোটার ৪ লাখ ১১ হাজার ৪৯৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৮ হাজার ৮৮৩ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৬১২ জন। এই আসনে ১৭২টি ভোট কেন্দ্রের ১২৪০টি ভোট কক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা।

[wps_visitor_counter]