দেশের বিচারিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ডিজিটাইজড করা হবে: আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক

প্রকাশিত : জুন ১১, ২০২২ , ৭:১৪ অপরাহ্ণ

ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আগামী ২ বছরের মধ্যে বিচারিক ব্যবস্থা পুরোপুরি ডিজিটাইজড করা হবে উল্লেখ করে বলেছেন, সারা দেশের জুডিশিয়াল সিস্টেমকে সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর, আরো স্বল্পসময় ও খরচে মানুষের হাতের মুঠোয় পৌঁছে দেয়া যায় এবং বিচারক ও আইনজীবি সহজে বিচারিক কাজ করতে পারে সে লক্ষ্যে ২ হাজার ২শ’ ২৪ কোটি টাকার “ই-জুডিশিয়ারি” নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে । প্রতিমন্ত্রী শনিবার আইন ও বিচার বিভাগ এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর একটি হোটেলে দেশের উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালতসমূহের বিচারিক সেবা ও তথ্য প্রদান প্রক্রিয়া সহজকরণে অনলাইন কজলিস্ট জুডিসিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড এবং মাইকোর্ট অ্যাপ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষ্যে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার কোর্টরুম ডিজিটাইজ করা হবে। আদালতে অডিও রেকর্ডিং পুল সিস্টেম থাকবে। পাশাপাশি ভার্চুয়াল টার্মিনাল করা হবে। এছাড়া ১৪টি সেন্ট্রাল জেল ডিজিটাল করা হবে। আসামিরা যেন জেল থেকে শুনানিতে অংশ নিতে পারে এজন্য ৯টি কেন্দ্রীয় কারাগারসহ ৬৪টি জেলা কারাগারে ক্যামেরা ট্রায়াল রুম করা হবে। গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে বৈঠক অ্যাপ ব্যবহার করা হবে। বিচারিক তথ্যের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে জেআরপি’র অধীনে সুপ্রিম কোর্টে একটি ফোর টায়ার ডেটাসেন্টার স্থাপন করা হবে বলেও তিনি জানান। ডিজিটাল ইকো সিস্টেম গড়তে ৩টি বিষয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে পলক বলেন, গত ১৩ বছর ধরে আইসিটি উপদেষ্টা আর্কিটেক্ট অভ্ ডিজিটাল বাংলাদেশ সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে ভেরিফায়েবল আইডি, ট্রাঞ্জেকশন প্লাটফর্ম ও ইন্টার অপারেবল প্লাটফর্ম তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে করোনা কালে এগুলোকে জোড়া লাগিয়েই আমরা অনলাইনে ও অফলনাইনের সব কাজ সচল রাখতে পেরেছি। মাত্র দুই মাসের মধ্যে ভার্চুয়াল কোর্ট ইন্ট্রডিউস করা সম্ভব হয়েছে। পলক বলেন, ডিজিটাল বিচারিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিচারকদের ২ হাজার ল্যাপটপ, অফিস স্ট্যাফদের জন্য ডেস্কটপ এবং ৭৫ হাজার আইনজীবী ও বিচারকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এছাড়াও ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেমসহ প্রত্যেকটি বার অ্যাসোসিয়েশনে একটি করে সাইবার ক্যাফে প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটুআই, ইউএনডিপি ও আইসিটি বিভাগ মিলে এই অবকাঠামোগুলো তৈরির পর এই অর্থবছরে বিচার ও স্বাস্থ্য বিভাগে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, কোনো দেশকে অনুকরণ করে নয়; আমাদের এটুআই, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, সুপ্রিম কোর্ট, আইন ও বিচার বিভাগসহ সবাই মিলে নিজস্ব একটি মডেল উদ্ভাবন করা হচ্ছে। আশা করছি স্বল্প খরচে নতুন একটি মডেল আমরা সারা বিশ্বে উপহার দিতে পারবো। এটুআই-এর কারিগরি সহযোগিতায় আইন ও বিচার বিভাগ এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশ এর উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির পক্ষে অনলাইন সিস্টেম তিনটির উদ্বোধন করেন জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আইনমন্ত্রী কোভিড পজেটিভ হয়ায় উপস্থিত হতে পারেননি। প্রসঙ্গত, ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচারিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে অনলাইন কজলিস্ট (মামলার কার্যতালিকা), জুডিসিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড এবং আমার আদালত (মাইকোর্ট) মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। কোন নির্দিষ্ট কার্যদিবসে আদালতে বিচারাধীন মামলার তালিকা জনগণ কিংবা বিচার সংশ্লিষ্ট যে কেউ causellst.judiciary.org.bd ওয়েবসাইট ও আমার আদালত (মাইকোর্ট) মোবাইল অ্যাপ ভিজিট করে তাঁর মামলার সর্বশেষ তথ্যাদি পাবেন। ওয়েবসাইটে প্রথমে সংশ্লিষ্ট বিভাগ, পরে জেলা এবং সর্বশেষ সংশ্লিষ্ট আদালতের নাম সিলেক্ট করে বিচারপ্রার্থীগণ তাঁদের মামলার সর্বশেষ আদেশ, পরবর্তী তারিখ এবং মামলার অবস্থা জানতে পারবেন। এ জুডিসিয়াল মনিটরিং ড্যাশবোর্ড বা বিচার বিভাগীয় ড্যাশবোর্ড-এর মাধ্যমে অধঃস্তন আদালতসমূহে বিচারাধীন এবং নিষ্পত্তি হওয়া মামলা সম্পর্কিত সকল ধরনের উপাত্ত সংগ্রহ, প্রদর্শন ও সংরক্ষণ করা হবে। এতে অধস্তন আদালতের মনিটরিং ও ট্র্যাকিং সিস্টেম হিসেবে এর মাধ্যমে আদালতসমূহের প্রকৃত অবস্থা, বিচারকর্মের গতি-প্রকৃতি এবং বিচারিক নানান পরিসংখ্যান জানা যাবে। বিচারপ্রার্থীসহ সর্বস্তরের জনগণ, বিচারকগণ এবং আইনজীবীবৃন্দ স্বস্ব প্রয়োজনে আমার আদালত (মাইকোর্ট) মোবাইল অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন। অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীগণ অধঃস্তন আদালতের জন্য প্রস্তুতকৃত সকল ডিজিটাল সেবাসমূহ গ্রহণ করতে পারবেন। বিচারক, আইনজীবী এবং জনসাধারণ পৃথকভাবে এই অ্যাপের বিভিন্ন ফিচারগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। গুগল-প্লে-স্টোর থেকে আমার আদালত (মাইকোর্ট) সার্চ করে যেকেউ এই অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারবে। আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মোঃ গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউএনডিপি বাংলাদেশ-এর আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ বেগম শারমিন নিগার। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ইউএনডিপি বাংলাদেশ, এটুআই-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, বিচারকগণ এবং গণমাধ্যমকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।

[wps_visitor_counter]