শ্যামপুরে অস্থায়ী রাসায়নিক গুদাম উদ্বোধন

প্রকাশিত : জুন ৪, ২০২৩ , ৫:২৫ অপরাহ্ণ

ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য নির্মিত গুদাম’ প্রকল্পের মাধ্যমে পুরাতন ঢাকার শ্যামপুরে অস্থায়ী রাসায়নিক গুদাম উদ্বোধন করা হয়েছে। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এম.পি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এই গুদাম উদ্বোধন করেন। গুদাম উদ্বোধন-কালে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, স্থানীয় সংসদ সদস্য তথা ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, প্রকল্পের ঠিকাদার নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মো: আব্দুল্লাহ আল মাকসুস এবং বিসিআইসি’র চেয়ারম্যান মো: সাইদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, নিমতলী ও চুরিহাট্টা ট্রাজেডীর যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সকলের সহায়তায় এই রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ সম্পাদন করা সম্ভব হয়েছে। অস্থায়ীভাবে নির্মিত এই রাসায়নিক গুদামে শীঘ্রই প্রকৃত ব্যবসায়িদের নিকট বরাদ্দ দেয়া হবে। টঙ্গীতে এরকম একটি গুদাম নির্মিত হচ্ছে। শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ইতোমধ্যে দেশে ব্যবসা ও শিল্পসহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সরকার অস্থায়ীভাবে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে বিশেষ করে পুরাতন ঢাকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে ৩১০ একর জমির উপর ‘বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেখানে আমরা ভূমি উন্নয়ন করেছি। বাউন্ডারী নির্মাণ ও অন্যান্য ভৌত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছি। প্লট বরাদ্দ প্রক্রিয়াধীন আছে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, রাসায়নিক দ্রব্যাদি, বিস্ফোরক দ্রব্যের জন্য আলাদা গুদামঘরের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, এ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুরান ঢাকা থেকে এগুলো স্থানান্তর করা হবে। আমি আশা করব, দ্রুত যেন এই নীতিমালাটি (পুরান ঢাকা রাসায়নিক দ্রব্যাদি স্থানান্তর নীতিমালা) প্রণয়ন করা হয়। এফবিসিসিআই, ঢাকার চেম্বারসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধি যারা এখানে আছেন তাদের মতামতের ভিত্তিতে একটি নীতিমালা করে দ্রুত স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হবে। এ নীতিমালা করতে যেন আবার কয়েক বছর লেগে না যায় সেজন্য আমি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবকে অনুরোধ করব। একটি সুনির্দিষ্ট সময় যেমন ১৫ দিন বা এক মাসের মধ্যে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় এবং নীতিমালাটি যেন ব্যবসাবান্ধব হয়। যারা এখানে গুদামে আসবেন তাদের কিন্তু আবারও বিনিয়োগ করতে হবে। তারা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় তারা যেন উৎসাহিত বোধ করে, স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। কিছু ছাড় দিয়ে হলেও সেভাবে যেন নীতিমালাটি করা হয়। এমনভাবে যেন কোন নীতিমালা করা না হয়, যেটা বাস্তবতার নিরিখে তাদেরকে আরো নিরুৎসাহিত করবে, সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে আমি অনুরোধ করব। এ বিষয়ে আমাদের তরফ হতে সকল ধরনের সহযোগিতা থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি, সকল বিপজ্জনক রাসায়নিক সামগ্রী ধীরে ধীরে স্থানান্তর হবে। একটি দুর্যোগপূর্ণ নগরী হিসেবে নয়, আমরা চাই ঢাকা হোক দুর্যোগ সহনশীল বাসযোগ্য একটি নগরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি বলেছেন, দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে দেশকে আবারও পেছনের দিকে নিয়ে যেতে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার জন্য স্বাধীনতাবিরোধীদের নানামুখী ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যহত রাখতে হবে। প্রকল্পটি মার্চ ২০১৯ সালে শুরু হয় এবং সম্প্রতি এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এতে প্রাক্কলিত ব্যয় ৭১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা হলেও প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ৬২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি তথা সরকারি অনুদান ৫৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং বিসিআইসি দিয়েছে ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ফলে এতে সরকারের প্রায় ৯ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। ৬.১৭ একর জমির উপর নির্মিত এ প্রকল্পটি বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ৩৫´×৩৫´×২০´ আকারের ৫৪(চুয়ান্ন)টি গুদাম ও ৭২´×৩৬´ আকারে তিনতলা বিশিষ্ট দুইটি অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, পুরান ঢাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব রাসায়নিক কারখানা ও গুদামসমূহ একটি নিরাপদ জায়গায় দ্রুততম সময়ে স্থানান্তরের লক্ষ্যে ‘উজালা ম্যাচ ফ্যাক্টরি লি:’ শ্যামপুর, ঢাকা এর স্থলে ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি জরুরিভিত্তিতে সরকার হাতে নেয়। এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভূক্ত প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত।

[wps_visitor_counter]