প্রতিবছর বৃদ্ধি হচ্ছে আমবাগান 

প্রকাশিত : মার্চ ১, ২০২৪ , ১০:৪৯ অপরাহ্ণ

আশরাফুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিবছর বৃদ্ধি হচ্ছে আমবাগান। গত ১৬টি অর্থবছরে আমগাছের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমগাছের সংখ্যা ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ৮০০টি থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮টি। সূত্রে জানা গেছে, ধান বা অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকদের পাশাপাশি শিক্ষিত বেকার যুবকরাও ঝুঁকে পড়ছেন আমচাষে। কেউ নিজের তো কেউ অন্যের জমি লিজ নিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমচাষ করছেন। এর ফলে প্রতিবছরই সম্প্রসারিত হচ্ছে আমবাগান। সেই সঙ্গে আমচাষের পুরনো ধরনও পাল্টে গেছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমচাষ হবার ফলে দেশী জাতের গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত. ল্যাংড়া, ফজলিসহ অন্য আমের পাশাপাশি বিদেশী জাতের কাটিমন, গৌড়মতি, আম্রপালি, হাঁড়িভাঙ্গা, ব্যানানা, ডকমাই, মিয়াজাকি, বারি-৪ আমচাষও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিদেশী জাতের আমগুলোর বেশির ভাগই নাবী জাতের হওয়ায় অসময়ে দামও বেশি পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে আম্রপালি। এইসব আম ঠা ঠা বরেন্দ্র ভূমিতেও হচ্ছে। আর তাই বরেন্দ্র অঞ্চলের  এলাকাজুড়ে গড়ে উঠছে আমবাগান। রফিকুল ইসলাম, গোলাম মোস্তফা, ইসমাইল খান শামীম, আহসান হাবীব, প্রয়াস মানবিক উন্নয়ন সোসাইটি, বরেন্দ্র কৃষি উদ্যোগসহ নতুন নতুন উদ্যোক্তা এইসব আমচাষ করছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন দেশে বাজারজাত করার পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করছেন। ধান বা অন্য যে কোনো ফসলের চেয়ে আমচাষে লাভ বেশি হওয়ায় তারা আমচাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। নাবী জাতের আমচাষী রফিকুল ইসলাম বলেন- আমাদের দেশী আমগুলো মৌসুমেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু গৌড়মতি, কাটিমন, ব্যানানা, আম্রপালি, হাঁড়িভাঙ্গা আম অনেক দেরিতে পাকে। ফলে দামও বেশি পাওয়া যায়। একারণে আমচাষ স¤প্রসারিত হচ্ছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, আম হচ্ছে আমাদের জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল। তিনি জানান, তাদের প্রায় ৬৫০ বিঘার আমবাগান রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন- আম এই জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল। এখন আমচাষের পুরাতন ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এখন আমচাষ হচ্ছে। ফলে আমবাগান স¤প্রসারণ হচ্ছে।

কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের হিসাবমতে, গত ১৬ বছরে আমবাগানের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সেই সঙ্গে উৎপাদনও বেড়েছে এবং বেড়েছে আমগাছের সংখ্যাও।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৯০০ হেক্টর, আমগাছ ছিল ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ৮০০টি। ওই বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর, আমগাছ ছিল ১৬ লাখ ৫ হাজার ৬০০টি। ওই বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০০৯-১০ অর্থবছরে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৫০০ হেক্টর, আমগাছ ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজারটি। ওই বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন।

২০১০-১১ অর্থবছরে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৭০ হেক্টর, আমগাছ ছিল ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৪০টি। ওই বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০১১-১২ অর্থবছরে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ২৮০ হেক্টর, আমগাছ ছিল ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪৪০টি। ওই বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন।

২০১২-১৩ অর্থবছরে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৮৩০ হেক্টর, আমগাছ ছিল ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ৫৯০টি। ওই বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ২৫০ হেক্টর, আমগাছ ছিল ১৭ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০টি। ওই বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ২৬০ হেক্টর, আমগাছ ছিল ১৭ লাখ ৯৫ হাজার ২৪০টি। ওই বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। ১০১৫-১৬ অর্থবছরে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর, আমগাছ ছিল ১৮ লাখ ৩৫ হাজার ২৫০টি। ওই বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ১৫০ হেক্টর, আমগাছ ছিল ১৯ লাখ ৬১ হাজার ২৫০টি। ওই বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ৫১০ হেক্টর, আমগাছ ছিল ২২ লাখ ১৩ হাজার ২৫০টি। ওই বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার ৮২০ হেক্টর, আমগাছ ছিল ২৩ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০টি। ওই বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ৩৫ হেক্টর, আমগাছ ছিল ২৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬২৫টি। ওই বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার ২৮৫ মেট্রিক টন।

২০২০-২১ অর্থবছরে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ৭৩৮ হেক্টর, আমগাছ ছিল ২৬ লাখ ৫ হাজার ৩৫০টি। ওই বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৮ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার ১৬৫ হেক্টর, আমগাছ ছিল ২৭ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫টি। ওই বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭৩৬ মেট্রিক টন।

২০২২-২৩ অর্থবছরে আমবাগানের জমির পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার ৫৮৮ হেক্টর, আমগাছ ছিল ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮টি। ওই বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ৪৩ হাজার ২২৫ মেট্রিক টন।

[wps_visitor_counter]