বরখাস্ত হওয়া ওসির শাস্তির দাবি ও নারী উদ্যোক্তাকে হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন

প্রকাশিত : এপ্রিল ৩, ২০২৩ , ১০:১৫ অপরাহ্ণ

আশরাফুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: সদ্য বরখাস্ত হওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজার শাস্তির দাবিতে ও এক নারী উদ্যোক্তাকে হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (০৩ এপ্রিল) দুপুরে গ্রামবাসীর আয়োজনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের খলসী বাজারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, স্থানীয় এক নারী উদ্যোক্তার সাথে পরকীয়ায় জড়ানোর অভিযোগে থানায় অপ্রীতিকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বরখাস্ত হয়েছেন ওসি সেলিম রেজা। এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতেই ওসি তার লোকজন দিয়ে ওই নারীকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। অথচ ওই নারী একজন সফল উদ্যোক্তা। সফল খামারী হিসেবে গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশবাসী তার পরিশ্রম ও কর্মকাণ্ডের কথা জানেন। বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ডেইরি খামার। একজন সফল খামারী হওয়ার পাশাপাশি অনলাইনে আমের ব্যবসা করেও নিচের অবস্থান শক্ত করেছেন। তাকে দেখে প্রত্যন্ত এই গ্রামের অনেক নারী কর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তিনি অন্যান্য নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করেন এবং যথাযথ পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করেন। বক্তারা আরও বলেন, দুঃখজনক বিষয় হলেও সত্যি, তার এই সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি কুচক্রী মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। কতিপয় দুষ্কৃতিকারী তাকে নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তিকর মিথ্যা বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করে তাকে হয়রানি করছে এবং সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মেয়ে সালমা খাতুনের পরিবার এলাকার বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা ঈদগাহ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমি দান করে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে। এমনকি খামার করতে গিয়ে বর্তমানে সোনালী ব্যাংক নাচোল শাখায় তার ১০ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন এনজিও-তে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে তিনি খামার ও আমের অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করেন। স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম বলেন, সমাজে বিভ্রান্তি-কারীদেরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছে ভোলাহাট থানার সদ্য বরখাস্ত হওয়া ওসি সেলিম রেজা। এর আগে সে নাচোল থানায় ওসি হিসেবে কর্মরত ছিল। সে সময় ওসি সেলিম রেজা সাথে মামলা সংক্রান্ত কাজে জড়িয়ে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় ওই নারীর সাথে। কিন্তু তার স্ত্রী এই সম্পর্কের কথা জানতে পারলে তার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে চাই ওসি সেলিম রেজা। অথচ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার সাথে বিভিন্ন সময়ে জেলা শহরের নাখেরাজপাড়ার বাড়ি ও বিভিন্ন জায়গায় রাত কাটায়। তিনি আরও বলেন, আপনার ইতোমধ্যে জেনেছেন, ওসি সেলিম রেজা নাচোল থেকে ভোলাহাট থানায় যোগদানের পর সম্পর্কের কথা অস্বীকার করলে ওই নারী দফায় দফায় বিয়ের দাবিতে থানায় অনশন করে। কিন্তু ওসি সেলিম রেজা তার প্রতি বিভিন্নভাবে থানায় মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে এবং তার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এরপর থেকে নানা-রকমভাবে হয়রানি ও মানহানি করতে তার পোষ্য বাহিনী দ্বারা আমাদের এলাকায় এসে নানাভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন, ডিভোর্স হওয়ার পর থেকেই সে একজন পরিশ্রমী ও সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। এমনকি তার এসব কর্মকাণ্ডের কারনে জেলা প্রশাসন তাকে সফল নারী হিসেবে সম্মাননা প্রদান করেছেন। তাকে নিয়ে মিথ্যা বানোয়াট বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদানের মাধ্যমে হয়রানির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। পাশাপাশি ওসি সেলিম রেজার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানায়।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক ইউপি সদস্য লোকমান আলী, খলসী গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম, মেসবাউল হক বাবু, তারেক, আশরাফুল ইসলামসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নারী-পুরুষ। এর আগে গত ২৩ মার্চ ওসি সেলিম রেজাকে বিয়ের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ওই নারী উদ্যোক্তা। এবিষয়ে ওই নারী উদ্যোক্তা বলেন, বিয়ের প্রলোভন দিয়ে বহুবার আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন ওসি সেলিম রেজা। কিন্তু এখন আমাকে বিয়ে করতে চাই না। বিয়ের দাবিতে গত ২৩ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করার পর ওসি লোকজন দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে মিথ্যা মামলা দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। এমনকি এসপি, ডিআইজি বরাবর করা অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। এনিয়ে আমি ও আমার পরিবার এখন নিরাপত্তা-হীনতায় ভুগছি। আমি যেকোনো মূল্যে তাকে বিয়ে করতে চাই। অভিযোগ অস্বীকার করে এবিষয়ে ওসি সেলিম রেজা জানান, আমি অনেক দূরে অবস্থান করছি। এসবের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে৷। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ বলেন, এক নারীর সাথে থানার অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পেয়ে প্রাথমিক তদন্ত করে ওসি সেলিম রেজাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই নারীর দেয়া লিখিত অভিযোগ পুলিশ হেডকোয়ার্টারে পাঠানো হয়েছে। এবিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার।

[wps_visitor_counter]