মন্ত্রী ও সংসদে সংরক্ষিত আসনে এমপি রাখার দাবি আদিবাসীদের

প্রকাশিত : নভেম্বর ১১, ২০২৩ , ৫:৫১ অপরাহ্ণ

আশরাফুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ, ভোটের আগে ও পরে নিরাপত্তা, উত্তরবঙ্গ থেকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী এবং সংসদে সংরক্ষিত আসনে এমপি রাখার দাবি জানিয়েছেন আদিবাসী জনগোষ্ঠী। শনিবার (১১ নভেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানায় আদিবাসী নেতারা। উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের আয়োজনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. প্রভাত কুমার টুডু বলেন, আগামী নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন-কালীন সরকারকে আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের সুষ্ঠু ভোটাধিকার প্রয়োগে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও নির্বাচন পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু ও আদিবাসী বিরোধী সহিংসতা প্রতিরোধে রাষ্ট্র তথা পুলিশ প্রশাসনকে আগাম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সকল গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল তাদের অঙ্গীকার নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানসহ উত্তরবঙ্গ থেকে একজন আদিবাসী টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ও সংরক্ষিত আসনে সংসদে প্রতিনিধি রাখতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলকে অঙ্গীকার করতে হবে, যে সকল নেতার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু ও আদিবাসী নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে কোন রাজনৈতিক দল তাদের আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন তো দেবেই না, বরং দলের কোন পদেও তাদের স্থান দেয়া চলবে না। অ্যাড. প্রভাত টুডু বলেন, আগামী সপ্তাহে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো একে-অপরের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্ব-বিবাদ, মারামারি, ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা এবং ক্ষমতাচ্যুত করা প্রভৃতি বিষয় এখন দেশের আদিবাসীসহ সকল মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রায় প্রতিটি নির্বাচনেই আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, নির্বাচন পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কখনওই তারা নির্ভয়ে এবং স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। বিভিন্ন রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী মহল বারবার তাদের হীন-স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বিভিন্ন অজুহাতে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম নির্যাতন, অত্যাচার, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ অনেক ধরনের মানবতা-বিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আদিবাসী নেতারা বলেন, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুরা যদি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণ, জবর দখলের মুখোমুখি হওয়ার সংস্কৃতি থেকে সুরক্ষিত থাকতে না পারি, তাহলে এর দায় কি নির্বাচন-কালীন সরকার, নির্বাচন কমিশন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী অস্বীকার করতে পারবেন? দেশের নাগরিক হিসেবে অন্যান্য নাগরিকের মতোই প্রতিটি নাগরিক তার স্বাধীনতা ভোগ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিজের স্বাধীনতা ভোগ করতে গিয়ে অন্যের স্বাধীনতা খর্ব করা, পরের ধন-সম্পদে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ করা কি সংখ্যালঘু কিংবা আদিবাসী শূন্য করার খড়যন্ত্র নয়? তারা আরও বলেন, উত্তরবঙ্গে প্রায় ৩২টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রায় ২৫-৩০ লাখ আদিবাসীদের দুঃখ-দুর্দশা, তাদের দাবি-দাওয়া ও চাহিদার কথা বলার মতো কেউ নেই। যার ফলে উত্তরবঙ্গের আদিবাসীরা শিক্ষা-দীক্ষা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা করেছে। অথচ এ অঞ্চলের অধিকাংশ আদিবাসীরা ডিজিটালের সাথেই পরিচিত নয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সভাপতি হিংগু মুরমু, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক প্রদীপ হেমব্রম, সংগঠনের জেলা শাখার সম্পাদক কর্ণেলিউশ মুরমু, আদিবাসী নেতা মদন হাঁসদা, বিশ্বনাথ মাহাতো, যতীন হেমব্রম, আদিবাসী নেত্রী রুমালী হাসদা, কুটিলা রাজোয়াড়সহ অন্যান্যরা।

[wps_visitor_counter]