আপনের বুদ্ধিও পর করে

প্রকাশিত : মার্চ ২৯, ২০২৪ , ৫:৪৯ অপরাহ্ণ

প্রতিকি চিত্র।

এই সমাজে যত বিচ্ছেদ, আলাদা হওয়ার ছল কিংবা দাম্পত্যের কলহ-এর খুব অল্পই স্বামী-স্ত্রী’র দ্বন্দ্বে হয়! টুকটাক সমস্যার পরেও দু’জন মিলতে পারে! প্রেমে না পারুক অন্তত দেহের রশি বাঁধে! মা কিংবা শ্বাশুড়িকে দায়ের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতেও বাধে তবুও দোষের সিংহভাগ তাদের দিকেই যাবে! কোন মা সন্তানকে বদ বুদ্ধি দিলে সে সংসার টিকবে, মিলমিশে থাকবে কিংবা সুখের ঘর বাঁধবে?-সে আশায় নাস্তি!

সংসারের অশান্তিতে ছেলে কিংবা মেয়ে-কোন পক্ষের মাকেই আলাদা করে কম-বেশি দায়ী করছি না! তবে যিনি ছেলেকে কিংবা মেয়েকে বিষে ভরা বুদ্ধি দেন তার সংসারটা নরক হয়ে ওঠে। তখন তাতে আর মাত্র একটি মানুষ ভোগে না গোটা সংসার-পরিবার ভুগতে শুরু করে! পূজা-পার্বণ, উপলক্ষ-আয়োজন সব পানসে হয় যায়! মানুষেরও ধৈর্যের সীমা থাকে, মানুষও সহ্যের প্রান্ত সীমায় পৌঁছে যায়! যে পক্ষ হার মানতে বাধ্য হয় তাদের বিপরীত কূল থেকে মন উঠে যায়! ধীরে ধীরে দূরত্ব বাড়ে!

আনুষ্ঠানিকতায় অনেকের সম্পর্ক বাহির থেকে ঠিকঠাক লাগে কিন্তু মনের সাথে মনের মিতালি কতোদিন থাকে, শূন্যতা কতোখানি অনুভব আঙে কিংবা কার জন কে অপেক্ষা করে-সেখবর মা-শাশুড়িদের কাছে থাকে না! তারা রাখার প্রয়োজনও মনে করে না! দ্বন্দ্ব সংঘাতে যারা দূরে থাকে, যাদের ভেতরটা কুঁড়ে খায়-বেদনার তীব্রতা কেবল তারাই জানে! বলা হয় না কিংবা শোনানো যায় না বলেই দূরত্বের ছায়া বাড়তে থাতে এবং একদিন ছায়া থেকে ছায়া হারিয়ে যায়! মায়া কেটে যায় তো শুরুর দিনে!

ছেলের মাও ছেলের মঙ্গল চায়, মেয়ের মাও মেয়ের মঙ্গল চায়! দু’কূলের মঙ্গলে মঙ্গলবার যে শনির দশায় ছেয়ে যায় সে খবর কে রাখে? দাম্পত্যে স্ত্রী-স্বামীর কিছু ব্যাপারে ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা রাখা দরকার! মা-শাশুড়ির কুমতলবের ছোবল থেকে সুখের দিনগুলো সরিয়ে নিতে হয়! এক-পাক্ষিক মঙ্গল আলোচনাও পাপ পাপ লাগে যদি সেখানে অন্যপক্ষের শনির দশা দাগানো থাকে! কোন কোন ব্যাপারের বুদ্ধি সম্পর্কের জন্য সর্বোত্তম সেই ম্যাচিউরিটি যদি জায়াপতির মধ্যে না আসে তবে বিবাহ থেকে যোজন যোজন বিয়োজনে থাকাই শ্রেয়!

বাবা-মায়ের কাছে সন্তানের ভালো থাকার বিভিন্ন অর্থ! একপক্ষ চায় একা ভালো থাকুক আরেকপ্রান্তে চায় সবাইকে নিয়ে ভালো থাকুক! উভয়পক্ষের দিকে সম্মানের প্রশস্ত বুকের ভালোবাসা অবারিত রেখে দু’জনের মাঝেও দাম্পত্যের কিছু বোঝাপড়া থাকা জরুরি! তিক্ততা জাগিয়ে সম্পর্কে রিক্ত হয়ে গেলে মাঝামাঝি কী আর থাকে? ব্যাল্যান্স করার মধ্যেই জীবনের শানিত সৌন্দর্য! দু’জনের পরামর্শে, যুক্তি ও মতাদর্শে বিশুদ্ধতায় সমন্বয় করলে বাহ্যিকতার অনেক অপঘাত থেকে সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখা যায়! দু’জনার কাছাকাছি থাকা হয়! দেহ দূরে সরে থাক-তবু মন দু’টি যদি পাশাপাশি না থাকে তবে কাগজে-কলমে থেকে আর কী হবে?

মা-শাশুড়ি কিংবা বাবা-শ্বশুর এদের কারো সম্মানই জীবনে কম করা যাবে না! কারো অবদান অস্বীকার করে অপবাদ জ্ঞাপনের সুযোগ নাই! দাম্পত্যে দু’জনের কিছু কৌশল থাকতে হয়, একজন আরেকজনকে আগলে রাখতে হয়! কোন এক পক্ষের যুক্তিতে-বুদ্ধিতে সকালে বিকাল গ্রাসের চিন্তা করলে, যখন-তখন সবকিছু দখলের কৌশল করলে সে সম্পর্ক বাঁচাবে কে? যখন শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে যায়, মায়ার মূল গজিয়ে যায় তখনের সর্বক্ষণ জড়িয়ে থাকার চেষ্টা সচল করতে হয়!

স্বামী-স্ত্রী দু’জনে সুন্দরভাবে সুখে-অসুখে বাঁচুক! দুঃখে-ফাগুনে মাতুক! মা-শাশুড়ির কিংবা বাবা-শ্বশুরের আড়চোখ এবং কুমন্ত্রণার সেতুতে বায়ু একটু কম গড়ালেই সময়টা সুন্দর করে বাড়ে! ভেতরে চাপা দুঃখ-কষ্টগুলো অবয়ব ছাড়ে! ফুল-মুকুলে, পাতা-পল্লবের দেশে এসে দোয়েল-শ্যামাও নাচে! মা-শাশুড়ি একচোখা বুদ্ধির ঢালা সরিয়ে নিলে হাজারও সম্পর্ক টিকে যায়! দু’জন দু’জনার থেকে যায়! নিজেদের তিক্ততা, নিজের বাজে অভিজ্ঞতা প্রজন্মের মাঝে না ছড়ালেই টেঁকসই সম্পর্কের গোড়াপত্তন হয়! অবিশ্বাসে দুনিয়ায় কেউ কেউ বাস করে; অনেকেই নয়!

রাজু আহমেদ। কলাম লেখক।
[email protected]

[wps_visitor_counter]