পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণের ২১ জেলায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে: সংসদে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী

প্রকাশিত : জুন ২৮, ২০২২ , ৯:৪৬ অপরাহ্ণ

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক, সংগৃহীত চিত্র।

ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক বলেছেন, পদ্মা সেতু বাঙালির অহংকার, আত্মপ্রত্যয়, সক্ষমতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক। পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছেন। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সড়ক নেটওয়ার্কসহ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে অবস্থিত দেশগুলোর মধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। এই সেতু অর্থনীতিতে নতুন বিনিয়োগ বাড়াবে পাশাপাশি বাড়াবে দেশের প্রবৃদ্ধির হার। পদ্মা সেতুকে সামনে রেখে শিল্পায়নের মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও স্বাধীনচেতা দৃঢ় নেতৃত্বে দেশীয় অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিমি দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। ইতোমধ্যে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এই অর্জন ও কৃতিত্বের দাবিদার একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শত প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি, বিশ্বব্যাংকের ভিত্তিহীন অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে পদ্ম সেতু নির্মাণে শেখ হাসিনা তাঁর পিতার মতো আপোষহীন, অটল ও অবিচল ছিলেন। কোনো চাপের কাছে শেখ হাসিনা মাথা নত করেননি। ২০১২ সালের ৮ জুলাই এই মহান সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেন পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে হবে। বাংলাদেশের জনগণের নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পাট মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাঁর সাহসী ও দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব, মানুষের প্রতি অপার ভালোবাসা পেয়েছেন। বন্দর নগরী চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ঢাকা মহানগরীর অভ্যন্তরীণ সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, প্রবেশ ও নির্গমন, মহাসড়কের যানজট নিরসন এবং ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য পরিকল্পিত ও সমন্বিত আধুনিক গণ-পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রথম মেট্রোরেল (উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত) বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া পূর্বাচল থেকে ঢাকা শহরের সঙ্গে সংযোগের মেট্রোরেলের আর একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। পাশাপাশি হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত গণ-পরিবহণ ব্যবস্থা বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এসব প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে ঢাকা শহরের যানজট নিরসন হবে। বস্ত্র খাতের সফলতা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এক সময় এদেশের তৈরি ঢাকাই মসলিনের সারা বিশ্বে কদর ছিল। বিভিন্ন কারণে প্রায় ১৭০ বছর পূর্বে এই গৌরবময় ঢাকাই মসলিন হারিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ঢাকাই মসলিন পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে মসলিন সূতা তৈরির তুলার জাত উদঘাটন এবং তুলা দিয়ে ৭০০-১০০০ কাউন্টের সুতা তৈরিসহ মসলিন শাড়ি তৈরির প্রযুক্তি তাঁত বোর্ড উন্মোচন করেছে। দেশের সাধারণ তাঁতীদের মাঝে এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভায় ‘ঢাকাই মসলিন হাউজ’ স্থাপন করা হয়েছে। বীর প্রতীক গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, একটি মসলিন শাড়ি তৈরি করতে প্রথমে সুতা তৈরি করতে হয় এবং পরে বুনন কাজ চলে। একটি মাঝারি মানের মসলিন শাড়ি তৈরি করতে ৫-৬ মাস সময় লেগে যায়। ফলে শাড়ির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। আমরা চেষ্টা করছি, বাণিজ্যিক উৎপাদনের মাধ্যমে মসলিনের স্বকীয়তা ঠিক রেখে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে। মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় ১২০ একর জমির ওপর ‘শেখ হাসিনা তাঁত পল্লি’ স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষদের তাঁতশিল্পের প্রতি আগ্রহী করতে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় তাঁতিদের কাপড় বোনা থেকে শুরু করে সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে। তাঁতিদের জন্য থাকবে আবাসিক ভবন, তাঁত শেড, ডরমেটরি, রেস্ট হাউস, সাইবার ক্যাফে ও বিদ্যুতের উপকেন্দ্র। তাঁতপল্লিতেই সপ্তাহে দুই দিন তাঁতপণ্যের হাট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সে হাটে সুতাসহ সবধরনের কাঁচামাল বিক্রয় ও প্রদর্শন করা হবে। তাঁতের কাপড় বোনা থেকে শুরু করে পোশাক তৈরি ও বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। পাট মন্ত্রী আরো বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকা শহরের ছিন্নমূল মানুষের বসবাসের জন্য রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া এলাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়াসার অধিকৃত জায়গায় একটি পুর্নবাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে বর্তমানে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের বসবাস। এখানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভক্ত এ চনপাড়াবাসী। যে কোনো প্রতিকূলতার মধ্যেও চনপাড়ার মানুষ নৌকায় ভোট দেয়। এখানকার মানুষ একসময় ভূমির অধিকার না থাকার কারণে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি, নাগরিক সুবিধা জাতীয় পরিচয়পত্র, ন্যায্যমূল্যে চাল, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতাসহ সকল সুবিধা থেকে তারা ছিল বঞ্চিত। ২০০৮ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসলে এরা ভোটের অধিকার ফিরে পায়। কিন্তু এখনও তারা দখলদারিত্বের ভিত্তিতে ভূমির অধিকার পায়নি। তিনি চনপাড়া হতদারিদ্র্য মানুষের দখলদারিত্বের ভিত্তিতে ভূমির অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ঢাকা ম্যাস র‌্যাাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১)’ প্রকল্পের আওতায় মোট ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নে পূর্বাচলের পাশে পিতলগঞ্জ মৌজায় মেট্টোরেল প্রকল্পের ডিপো র্নিমাণের কাজ চলমান আছে। ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলার মানুষ যাতে সহজে ঢাকায় এসে অফিস করে আবার বাড়ি যেতে পারে সে জন্য এই মেট্রোরেল প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

[wps_visitor_counter]