জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

প্রকাশিত : জানুয়ারি ৯, ২০২৪ , ৫:২৩ অপরাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংগৃহীত চিত্র।

ঢাকা, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“বাঙালির মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাসে এক কালজয়ী মহাপুরুষ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এই দিনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে ফিরে পায়। আমাদের মহান নেতার আগমনে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের আনন্দ পরিপূর্ণতা লাভ করে।
জাতির পিতা পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য দীর্ঘ ২৪ বছর সংগ্রাম করেছেন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রাম সকলক্ষেত্রেই তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, সবসময় দূরদর্শী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৭০ এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা পূর্ব বাংলার জনগণের এ রায়কে উপেক্ষা করে, শুরু করে প্রহসন। বাংলার নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে জাতির পিতা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের এক জনসমুদ্রে ঘোষণা করেন ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। …এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি নিধন শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরপরই পাকিস্তানি বাহিনী জাতির পিতাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের অজ্ঞাত স্থানে কারান্তরীণ করে রাখে এবং তাঁর ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালাতে থাকে। তিনি ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পাকিস্তানের সামরিক আদালতে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুণতে গুণতেও তিনি বাঙালির জয়গান গেয়েছেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণশক্তি। তাঁর অবিচল নেতৃত্বে বাঙালি জাতি মরণপণ যুদ্ধ করে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে। পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। একইদিন সকালে তিনি লন্ডনে অবতরণ করেন। সেখানে তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১০ জানুয়ারি সকালে দিল্লীতে যাত্রাবিরতি দিয়ে দুপুরে তাঁর প্রিয় মাতৃভূমিতে পদার্পণ করেন। ঐদিন রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসমুদ্রে এক ভাষণে তিনি পাকিস্তানি সামরিক জান্তার ভয়াবহ ও নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন। সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা সংঘটনের দায়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বিচারের মুখোমুখি করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। তাঁর বলিষ্ঠ পদক্ষেপে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ১৫ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করে। তিনি একইবছর ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে স্বাক্ষর করেন। জাতির পিতার সফল দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক তৎপরতায় বাংলাদেশ বিশ্বের ১২৩টি দেশ এবং ১৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃতি লাভ করে। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে মাত্র সাড়ে তিন বছরেই স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী চক্র জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে এদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চালু করে। তারা ’৭৫ এর ২৬ সেপ্টেম্বর দায়মুক্তি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেয়। মোস্তাক-জিয়া চক্র খুনিদের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে কূটনীতিকের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে, রাজনৈতিকভাবেও প্রতিষ্ঠিত করে। মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে বিকৃত করে। সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করে। বিএনপি-জামাত সরকার এই ধারা অব্যাহত রাখে।
২১ বছরের দীর্ঘ সংগ্রাম ও অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমরা একইবছর ১২ নভেম্বর ‘দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল আইন, ১৯৯৬’ প্রণয়ন করে জাতির পিতা হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করি। পাঠ্যপুস্তকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরি। তাছাড়া, ২০০৮ সাল থেকে পরপর চার দফা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছি। আমরা জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করেছি। ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, ফলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনি ইশতেহারে ২০২৪ সাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছি। আওয়ামী লীগের পূর্বের ইশতেহারগুলোর ধারাবাহিকাতায় নতুন ইশতেহারেও জনগণের উত্তরোত্তর আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে, তাই এবারেও দেশের মানুষ আমাদের দলের ওপর আস্থা রেখেছেন এবং ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনের মাহেন্দ্রক্ষণে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে। ইনশাল্লাহ্ ২০২৬ সাল থেকে আমাদের সরকারের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সম্মুখ যাত্রা শুরু করবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্ন ছিলো একদিন এদেশের মানুষ নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই নির্ধারণ করবে। সেলক্ষ্যেই তিনি গোটা জাতিকে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন এবং সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদনের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। ভিনদেশি শক্তির কাছে মাথা নত করে নয়, স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ আজ বিশ্বের বুকে গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে চলছে সেটাই আওয়ামী লীগ সরকারের পরম পাওয়া। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের এই শুভলগ্নে আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি- দেশি-বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ তথা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে কার্যকারী ভূমিকা রাখবো।
আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গৃহীত সকল কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”

[wps_visitor_counter]