বাজারে আম না আসায় ঘোষণার পরেও চালু হচ্ছে না ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন

প্রকাশিত : মে ২০, ২০২৩ , ৫:২২ অপরাহ্ণ

আশরাফুল ইসলাম, নিজস্ব প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: গতবছরের ন্যায় এবছরও আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আমের ট্রেন হিসেবে পরিচিত “ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন” চালুর ঘোষণা দেয়ার পরেও তা চালু হচ্ছেনা। প্রথমে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এবং পরে ২০ মে ট্রেনটি চালুর ঘোষণা দেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক (সিসিএম) সুজিত কুমার বিশ্বাস ও বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন। কিন্তু রেলস্টেশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনও আমের বাজার জমে উঠেনি। ফলে জেলার আমের বাজারগুলো চালুর পর ট্রেনটি চালু হতে পারে। গতবছর আমের মৌসুমের শুরুতেই ট্রেনটি চালুর দাবী করা হলেও আম মৌসুম শুরুর পরে ৩ দফা সময় পরিবর্তন করার পর জেলার রহনপুর রেলস্টেশন থেকে ১৩ জুন ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটির উদ্বোধন করা হয়। এর আগে ০১ জুন ও পরে ০৮ জুন ট্রেনটি চালুর সম্ভাব্য সময়সূচী ঘোষণা করা হয়েছিল। রহনপুরের আম ব্যবসায়ী আব্দুর রাকিব বলেন, গতবছর মে মাসের শেষ দিকে আম বাজারে আসলেও ট্রেনটি নানা নাটকীয়তার পর জুন মাসের মাঝামাঝিতে চালু করা হয়। এরপর আমের স্বল্পতা এবং লোকসানের কারনে চালুর ১১ দিনের মাথায় বন্ধ হয়ে যায় ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি। একইভাবে এবছর ২০ মে চালুর কথা থাকলেও আবারও ট্রেন চালুর ঘোষণা পরে দেয়া হবে বলে জানা গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এবং আম ব্যবসায়ীদের মাঝে আস্থা আনতে না পারলে এবারও আমের ট্রেনটিকে লোকসান গুনতে হবে। আমচাষী ও বিক্রেতা তরিকুল ইসলাম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম একটু দেরিতে বাজারে আসে। এখন গুটি ও গোপালভোগ জাতের আম বাজারে এসেছে। কিন্তু তা পরিমাণে অনেক কম। কয়েকদিনের মধ্যেই জমে উঠবে বাজার। ক্ষিরসাপাত, ল্যাংড়া, বোম্বাই আম বাজারে আসতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগতে পারে। এসব আম আসলে বাজার জমে উঠবে। তখন ট্রেন চালু করলেই সুবিধা হবে। রেল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রথম ২০২০ সালের ৫ জুন ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন উদ্বোধন করা হয়। দ্বিতীয় বারের মতো ২০২১ সালের ২৭ মে ট্রেনটি চালু করা হয়। ট্রেনটি ১৬ জুলাই পর্যন্ত আম পরিবহন করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলওয়ের স্টেশন মাষ্টার শহিদুল ইসলাম মিঞা জানান, এ বছর এখনও আমের বাজারগুলো চালু হয়নি। ২১ মে রহনপুর ও ২৫ মে সদর উপজেলার আমবাজারগুলো চালু হবে।তাই কর্তৃপক্ষ আগামী ২৫ মে এর পর ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের সময়সূচী ঘোষণা করবে। লোকসান বা ব্যবসায়ীদের আস্থার সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতিম্যধ্যই রেল কর্তৃপক্ষ ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছে। তাছাড়া ট্রেনটির সময়সূচী চূড়ান্ত হলে স্থানীয়ভাবেও ব্যাপকহারে প্রচার-প্রচারণা করা হবে। যেহেতু গত দুই বছর ধরে ১ টাকা ৩১ পয়সা কেজি দরে আম পরিবহন করছে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন, এবছরও ভাড়া অপরিবর্তিত থাকবে। বেশি ওয়াগন নিয়ে ২টি ট্রেন চালু হবে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এবছর আশা করা যায়, ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন থেকে ভাল কিছু রাজস্ব আসবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার এন্ড কমার্সের পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এই বিশেষ ট্রেনে আম ছাড়াও লিচু, মৌসুমি ফলসহ সব ধরনের কৃষিপণ্যও কম খরচে ঢাকায় নেওয়া যায়। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আম নিতে খরচ পড়ে ১ টাকা ৩১ টাকা। কুরিয়ার সার্ভিসে এক টন আম ঢাকায় নিতে খরচ পড়ে ২০ হাজার টাকা। অন্যদিকে, ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে ট্রেনে খরচ পড়ে মাত্র এক হাজার ১১৭ টাকা। এরপরও ট্রেনটি জনপ্রিয় হতে না পারাটা দুঃখজনক। উল্লেখ্য, প্রথমে মে মাসের শেষ সপ্তাহে এবং পরে সোমবার (১৫ মে) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আম পরিবহন সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় ২০ মে থেকে চালু হচ্ছে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন এমন ঘোষণা দেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন। সেই সাথে জানানো হয়, এবছর একটি ট্রেন বাড়িয়ে দুইটি এবং ট্রেনের ওয়াগন বাড়িয়ে ৮-৯টি ওয়াগনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

[wps_visitor_counter]