নান্দাইলে আতশবাজি কারখানায় বিস্ফোরণে দুই নারী শ্রমিক নিহত

প্রকাশিত : এপ্রিল ২০, ২০২২ , ৫:১৪ অপরাহ্ণ

মোঃ আজিজুর রহমান ভূঁঞা বাবুল, ময়মনসিংহ, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন:ময়মনসিংহের নান্দাইলে আতশবাজি তৈরির কারখানায় হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণে দুই নারী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হন কমপক্ষে পাঁচজন। পরে আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল ছাড়াও জেলা শহরে পাঠানো হয়েছে। বুধবার (২০ এপ্রিল) ভোরে নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের দক্ষিণ বাঁশহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আর এ ঘটনার পর থেকেই বাড়ির মালিক ছাড়াও গ্রামের অনেকেই পলাতক রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের দক্ষিণ বাঁশহাটি গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে মোঃ বোরহান উদ্দিনের আধপাকা এই বাড়িটিতে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে নির্বিঘ্নে আতশবাজি তৈরি করা হচ্ছিল। প্রত্যন্ত গ্রামের ভেতরে হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি। এতে কমপক্ষে ৫০ জন শ্রমিক পালাক্রমে ওই কারখানায় কাজ করতেন। স্থানীয় প্রভাবশালী বোরহান উদ্দিন অতি গোপনে কারখানাটি চালিয়ে আসছিল। আর এই কারখানা থেকে প্রতি-সপ্তাহে বিভিন্ন যানবাহন-ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হতো এসব আতশবাজি। আশপাশে এ ধরনের কোনো কারখানা না থাকায় বোরহানের কারাখানার ছিল ব্যাপক চাহিদা।প্রতিবেশীরা জানায়, বুধবার (২০ এপ্রিল) ভোরে এ এলাকায় হালকা ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হয়। ওই সময় হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। পরে গিয়ে দেখতে পায় পাশেই বোরহানের কারখানার ওপরের টিন উড়ে গেছে এবং দেয়াল ধসে পড়েছে। বিস্ফোরণটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে আধপাকা ঘরটির টিনের চাল ছাড়াও দেয়ালের ইট চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে উড়ে যায়। সেই সঙ্গে ঘরের মেঝেতে বড় গর্ত হয়। এ সময় ভেতরে থাকা দুই নারী শ্রমিকের দেহের বিভিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে ঘটনাস্থল থেকে ২ থেকে ৩ শ’ মিটার দূরে। এ ঘটনায় নিহত নারী দু’জন হচ্ছেন পাশের এলাকা বারইগ্রামের আবুল হোসেনের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৩০) ও বাঁশহাটি গ্রামের আব্দুল গনির স্ত্রী মোছা: আফিলা বেগম (২৮)। নিহতদের স্বজনরা জানান, প্রতিদিনের মতো সাহরী খেয়ে ওই দু’জন কাজ করার জন্য কারখানায় যায়। যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণ হারায়।প্রতিবেশীরা আরও জানান, বিস্ফোরণে ভাঙা বাড়ির ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। মৃতদের দেহের বিভিন্ন অংশ বাড়ির বাইরে পড়ে রয়েছে। আতশবাজির ঝাঁঝাল গন্ধ ছাড়াও লাশের পোড়া গন্ধও চারদিক। পাশের বাঁশঝাড়ের ওপরে ও ধান ক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ঘরের টিন, ইট ছাড়াও আসবাবপত্র। বিস্ফোরণের সময় পাশের ঘরের ঘুমন্ত লোকজনও আহত হয়। ঘটনার পরই স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে ঘটনাস্থল থেকে দুই নারীর দেহের অংশ উদ্ধার করে বডি ব্যাগে করে নিয়ে যায়।
তবে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে বলে তাৎক্ষণিক প্রচার চালান বোরহান উদ্দিন ও তার লোকজন। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল), ডিবি পুলিশ, এনএসআই ও পিবিআইসহ অনেক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার মোহাঃ আহমার উজ্জামান বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে পটকা তৈরির বারুদ থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, এখানে এই কারখানা কিভাবে এতদিন চলত। এ-ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

[wps_visitor_counter]