ফিলিপাইনে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৪ , ২:২৪ পূর্বাহ্ণ

ম্যানিলা, ফিলিপাইন, ব্রডকাস্টিং নিউজ কর্পোরেশন: বাংলাদেশ দূতাবাস, ম্যানিলার উদ্যোগে এ বছর ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনের মধ্য দিয়ে ফিলিপাইনে ‘শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪’ উদযাপিত হয়েছে। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ) দেশটির শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতিসংঘ ফিলিপাইন অফিসের সাথে সম্মিলিতভাবে দূতাবাস একটি সিম্পোজিয়াম ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়-এর বিভিন্ন বিষয়ের অনুষদবৃন্দ, বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনৈতিকবৃন্দ, আন্তর্জাতিক ও বহুজাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রী এবং মিডিয়া-কর্মীসহ প্রায় আড়াই-শত অতিথি উক্ত সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করেন। ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়-এর দিলিমান ক্যাম্পাসের NISMED অডিটোরিয়ামে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে Multilingual Education: An Essential Strategy for Transforming Education Systems শীর্ষক সিম্পোজিয়ামে বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দিলিমান ক্যাম্পাস উপাচার্য অধ্যাপক এডগারদো কার্লো ভিসতান, সমাজবিজ্ঞান ও দর্শন অনুষদের ডিন অধ্যাপক রুথ লুস্টেরো রিকো, ফিলিপাইনে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুস্তাভ গঞ্জালেস এবং ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এফ এম বোরহান উদ্দিন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অফ এডুকেশন এর প্রধান অধ্যাপক ডিনা জোয়ানা ওকাম্পো ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মারিয়া ক্রিস্টিনা। রাষ্ট্রদূত এফ এম বোরহান উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেওয়ার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং এর তাৎপর্য বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ১৯৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর প্রভু-সুলভ মনোভাবের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং ভাষার ভিত্তিতে বাঙালির জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ। যার পথ পরিক্রমায় শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। আর এই ভাষা সংগ্রামই বীজ বপন করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি অর্জন করে। রাষ্ট্রদূত ঢাকাস্থ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট এবং ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের মধ্যে ভাষা-তাত্ত্বিক গবেষণার উপর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাবনা করেন। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুস্তাভ গঞ্জালেস বলেন, সকলকে সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ ও সমতা-ভিত্তিক শিক্ষার জন্য মাতৃভাষা ও বহুভাষাবাদ একটি ভিত্তিপ্রস্তরস্বরূপ। উপাচার্য অধ্যাপক এডগারদো কার্লো ভিসতান বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারিকে জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের মনের আবেগ প্রতিফলিত হয়েছে। সিম্পোজিয়াম শেষে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের ১২টি ভাষায় সমবেতভাবে গাওয়া একুশের অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রদর্শিত হয়। এর আগে সকালে বাংলাদেশ হাউসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিত করেন রাষ্ট্রদূত এফ এম বোরহান উদ্দিন। এ সময় এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে বাংলাদেশ হাউস প্রাঙ্গণে স্থাপিত অস্থায়ী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে উপস্থিত সকলে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তাছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

[wps_visitor_counter]