জীবনের গোলকধাঁধা

প্রকাশিত : মার্চ ১২, ২০২৪ , ১০:০১ অপরাহ্ণ

প্রতিকি চিত্র।

ব্যস্ততা এলেই নিজেকে বলি, এই ব্যস্ততা ফুরালে তারপর অখণ্ড অবসর। তখন শখের এটা পূরণ করবো, ওটা করবো। উড়বো-ঘুরবো, বিন্দাস কাটাবো। অথচ এক ব্যস্ততা ফুরাতেই আরও তিন ব্যস্ততা হাজির হয়। জীবন যত সামনে যাচ্ছে তত জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। আড্ডার সময়, গল্পের আসর আর জমছে না। সামনের দিনগুলো ব্যস্ততায় মুড়িয়ে আবেগিক সম্পর্কগুলো স্বাভাবিকতা হারাচ্ছে। কৃত্রিমতার চাদরে গুটিয়ে যাচ্ছে মানুষ। পারস্পরিক কথা হচ্ছে মেপে মেপে, আচরণ করছে হিসেব করে এবং মিলিত হচ্ছে স্বার্থের বাটখারায় পা দিয়ে, দিয়ে।

প্রাত্যহিক জীবনের অনেক ব্যস্ততার অনেকাংশই অপচয়। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশের একভাগ অকাজেই চলে যাচ্ছে। যে ব্যস্ততায় মানুষের দিন ফুরাচ্ছে সেখানে নিজেকে জানার কিংবা চেনার সামান্যতম চেষ্টা পর্যন্ত নাই। সব অপরের জন্য! কতবেশি সঞ্চয় করা যাবে, কি কি ভোগ করা যাবে, কাকে কাকে ঠকানো যাবে এবং কোথায় কোথায় জয়ী হওয়া যাবে সেই দ্বন্দ্বে মানুষ তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারাচ্ছে। ব্যস্ততায় মানুষের ভেতরের স্বাভাবিক নির্মলতা, মনের পবিত্রতা খুইয়েছে। শখের জীবন অসুখেই লগ্নি করছে।

অভাব সামনে দাঁড়ালেই মনে মনে ভাবি এবার উৎরে গেলে সামনের দিনগুলো খুব স্বাচ্ছন্দ্যে যাবে। সব দুঃখ মুছে যাবে। নিজের সব শখ পূরণ করবো, প্রিয়জনের চাওয়া মিটিয়ে দেবো। অথচ যত সামনে চলি তত অভাব বাড়ে । যে দিন যায় সে দিন ভালো যায়। শখের সাথে বাস্তবতার সমন্বয় বড্ড জটিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আয় বাড়ছে কিন্তু অভাব কমছে না। চাহিদা শাখা-প্রশাখা বিস্তার করছে। দ্রব্যমূল্য ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভালো থাকার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে। একটি চাহিদা মিটতেই বহু চাহিদা সমাজ বাস্তবতায় সামনে আনছে।

আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার অনেকাংশেই গরীবের ঘোড়া রোগ ভর করছে। আমরা অযাচিত-অপ্রাসঙ্গিক অনেক কিছুই কামনা করছি। ভোগের খতিয়ান দীর্ঘায়িত হচ্ছে। মানসিকতার দৈণ্যতা, রুচির দুর্ভিক্ষ এবং আভিজাত্যের খোলসের অসুস্থতা আমাদের নৈমিত্তিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। দিন দিন যেন খেই হারিয়ে চলছি। সাধ্য এবং সাধের মিলন ঘটছে কিঞ্চিৎ! যেন এক অসুখী আগামীর দিকে আমাদের অগ্রযাত্রা অবিরাম হয়েছে। দিনশেষে ডায়েরিতে ভালো আছি’-লিখতে পারছি না। হাসি মুখে বলতে বাধ্য হচ্ছি ভালো আছি! পরক্ষণেই নিজেকে জিজ্ঞেস করছি, আমি কি আসলেই ভালো আছি?

শৈশব এবং কৈশোর কালই জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়। গোটা যৌবন সংগ্রামের। অপরের শখ পূরণের জন্য ব্যয় করতে হয়। আমরা আশায় থাকি, এই বুঝি দুঃখ ফুরিয়ে, সুখ এলো বলে। সব শখেরা জীবন পেলো। কতক মেলে আর কতক অধরাই থেকে যায়। তবুও আমরা আশায় থাকি, রাত পোহাবে, ভোর আসবে। জীবনের এই গোলকধাঁধায় বহু-জীবনে সাঁঝ নামে। আবার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে বায়ু দিক পরিবর্তন করে। একটা সুযোগ পেলেই জীবন স্থির হয়ে যাবে! ভাগ্য কাকে, কোথায় টেনে নেয়, তা কে জানে? অপেক্ষায় অপার হয়ে বসে থাকি!

রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক।
[email protected]

[wps_visitor_counter]