সুখের জন্য পরিবারকে প্রাধান্য দিতে হবে

প্রকাশিত : নভেম্বর ১১, ২০২৩ , ১২:৩৬ অপরাহ্ণ

ভুল হয়ে যাবে বিলকুল, ভুল! আপনার রক্তের কেউ নয় এমন কারো কাছে আপনার দুর্বলতা, ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলেন নাকি? আপনার জীবনের সাথে জড়িত, এর বাইরের কারোর কাছে আপনার কষ্ট-ব্যথা শেয়ার করেন? কর্মক্ষেত্রের কষ্টের কথা শেয়ার করতে পারেন কিন্তু আপনার নিজের সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা শেয়ার করলে বিপত্তি জন্মাতে শুরু করবে! আপনার দুর্বলতাকে তার শক্তিতে পরিণত করবে! সুযোগ-মতো আঘাতে আঘাতে আপনাকে ভস্ম করে দেবে! আপনার শান্তিকে অশান্তিতে জর্জরিত করে ফেলবে! জীবনে কিছু কিছু ভুল করার আগেই সাবধান হওয়া দরকার!
স্বামী-স্ত্রী’র সাময়িক দ্বন্দ্ব কলিগদের কাছে শেয়ার করলেন? ভার্চুয়ালের কোন শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছে? একটু কথা বলে মনে হয়েছে ভরসা করা যায়-এমন কারো কাছে? এমন ভুল করতে যাবেন না! এই আলোতে মানুষ চেনা মুশকিল! আপনাকে সান্ত্বনা দেয়ার নামে ফুসলাবে! আপনাকে এমনভাবে ইমপ্রেস করবে যাতে আপনার মনে হবে, আপনি সাধু আর জগতের সব দোষ প্রতিপক্ষের! আপনি যখন নালিশ করেন, পরের দোষ বলেন তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনি আপনার দোষ দেখেন না, আপনার ভুল পান না! জগতের নিরেট নিষ্কর্মাদের কাজই হচ্ছে আপনাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আপনার সমস্যা বের করা! আপনি বোকার মত সেই ফাঁদে পা দিয়েন না! ভোগান্তি বাড়বে।
সুযোগে আপনার কথিত শুভাকাঙ্ক্ষী আপনাকে এমনভাবে ভুগিছগি বোঝাবে যাতে আপনার মন বিষিয়ে যাবে! যে আপনার আপনের আপন তাকে মনে হবে দূর আলোকের শত্রু! আর এই সুযোগে বজ্জাত কায়দা করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করবে! আপনি তার হাতে অজ্ঞাতেই আপনাকে ঘোরানোর-দাবানোর অস্ত্র তুলে দিছেন! এখন খোঁচাবে, খুঁটবে! আপনার আসলে তখন তেমন কিছু করার থাকবে না! করতে গেলে আপনার সমস্যা আরও বহু কান করে করে রাষ্ট্র করে দেবে! তখন আপনাকে নিয়ে সবাই হাসবে।
সমস্যা-হীন পৃথিবী হয় না। আপনার যন্ত্রণা আপনার রক্তের কারো কাছে শেয়ার করুন। সে বকলেও আপনি তা শুনুন। সেখানে মঙ্গল নিহিত আছে। যারা আপনাকে ঠকাবে না তারা আপনাকে কখনোই ব্যথা দিতে পারে না। সম্পর্কের মধ্যে সমস্যা অতি স্বাভাবিক ঘটনা। সব সমস্যার সমাধান আছে। সমস্যাকে স্থায়ীভাবে টিকিয়ে রাখতে, যন্ত্রণা পোহাতে, বিচ্ছেদে গড়াতে তৃতীয় পক্ষের হাতে ছড়ি তুলে দিবেন না! আপনাকে দুর্বল অবস্থায় পেলে ঘিরে ধরা জীবের উপস্থিত হতে সময় লাগবে না!
যে সমস্যা ভেতরের সে সমস্যা বাইরে আনলে বিপত্তি বাড়তে থাকবে। সমস্যা সমাধান হয়ে যখন সব স্বাভাবিক হবে তখনও অবগতরা আপনাকে তেমনি ভাববে, মশকরা করবে! সান্ত্বনার নামে উসকানিমূলক বাক্য বলবে! যা আপনার দহন নতুনভাবে উসকে দেবে। আপনি একটু বোকাসোকা টাইপের হলে অপব্যবহার হবেন! নিজের সমস্যা, নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করুন। কিংবা পারিবারিক মুরুব্বিদের শরণাপন্ন হোন। প্রয়োজনে আইনের বারান্দায় যান তাও তৃতীয় পক্ষের কাছে নয়। যারা আপনার সমস্যাকে ইস্যু বানাতে পারে তাদের কাছে আপনাকে দমনের অস্ত্র তুলে দেয়ার মত বোকামি করবেন না!
ফেসবুকের পরিচয় নিছক স্যাডো সম্পর্ক তৈরি করে। এখানে আসল সম্পর্ক হয় না! কাজেই এখানে বিশ্বাসের চেয়ে অবিশ্বাসকে বেশি প্রধান্য দিবেন। ঘরের সমস্যার কথা তাদের না বলাই ভালো, যাদের সাথে রোজ স্বার্থের জন্য দেখা হয়! যাদের সাথে আপনার প্রতিযোগিতা আছে! আপনি যাকে সমস্যার কথা বলছেন আর যারা তাতে মশলা মেশাচ্ছে, তাদের জীবনের সমস্যা আপনার সমস্যার চৌগুণ! এটা যদি আপনার বিশ্বাস নাও হয় তবুও প্রমাণ করতে যাওয়ার দরকার নাই!
আপনার হারের মন্ত্র এমন কাউকে শিখাবেন না যে যখন-তখন ইচ্ছা হলেই আপনাকে হারিয়ে দিতে পারে! জীবনে গুনে গুনে মানুষ বিশ্বাস করুন। ছোট্ট জীবনকে সুখী করতে অনেক মানুষের দরকার নাই। বিশ্বস্ত কিছু মানুষ আশেপাশে থাকলেই জীবন সুন্দর। জীবনের সর্বক্ষেত্রে পরিবারকে প্রাধান্য দিন। আপনার কল্যাণের জন্য পরিবারের চেয়ে মহান কোন প্রতিষ্ঠান নাই। আপনাকে আগলে রাখতে, আপনাকে আশা-ভরসা দিতে, আপনার হাসি দেখতে পরিবার সবকিছু করতে পারে, সবকিছু।

রাজু আহমেদ।
কলামিস্ট।
[email protected]

[wps_visitor_counter]