বর্জনকে অর্জন ভেবে ছুটছি

প্রকাশিত : নভেম্বর ২১, ২০২৩ , ৯:০৪ অপরাহ্ণ

বড় চাকুরী করা আর বড় মানুষ হওয়া যোজন যোজন পার্থক্য। ছোট চাকুরী করে এমনকি কিছু না করেও বড় মানুষ হওয়া যায়। অনেক অর্থ থাকা আর ভালো মানুষ হওয়া এক কথা নয়! অনেক ক্ষমতা থাকা আর আলোকিত নেতা হওয়া সমান্তরাল নয়। অনেক বড় বড় কবি-সাহিত্যিক মানুষ হিসেবে নিম্ন ছিলেন! কাজ আদায় করে নেয়া বস হওয়া আর সফল বস হওয়া মোটেই কাছাকাছি কথা নয়!
আপনার সামর্থ্য আছে, আপনি পাহাড় কিনতে পারেন! কিন্তু অসামর্থ্য একজন যিনি বালুকণা কেনার ক্ষমতা রাখে না তার সামনে আপনার বিত্তের ঔদ্ধত্য, ক্ষমতার ছড়ি দেখিয়ে তাকে লজ্জা দেয়া, হীনমন্যতায় ভোগানো, নিজের অক্ষমতাকে ধিক্কার দেওয়ানো এসবে আপনার ভালো মানসিকতা প্রকাশ করে না। বরং চিন্তার দীনতা, মানসিকতার নীচতা প্রমাণ করে। অথচ আপনি আরও মহৎ হতে পারতেন! আপনার পোশাক দামী,আপনার আহার ও আহারের স্থান নামী, আপনার সৌন্দর্য ভারী সেসব ততক্ষণ সুন্দর যতক্ষণ আপনার থেকে বিনয় প্রকাশ পায়। এসব নিয়ে অহংকার দেখালে, অনর্থক গর্ব করলে, জনে জনে প্রচার করলে মানুষ হিসেবে আপনার নীচতা মাটির নিম্নগতি লয়! আচরণ-কথা প্রমাণ করে দেয় মানসিক শান-শওকাতের! আপনার যা ছিল তা আপনারই থাকছে। এর সাথে একটু ভালো ব্যবহার করলে চরিত্রের আভিজাত্য প্রকাশ পেত। অথচ উল্টো চললেন! যা বললেন তা শ্রোতার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে দেয়! জ্ঞান আপনার সৌন্দর্য, সুরত আপনার মাধুর্য, ক্ষমতা আপনার পালক, নমনীয়তা চরিত্রের আলোক! কিন্তু সেসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আড়াআড়িভাবে আপনার মনুষ্যত্ব কাটা পড়ে। রূপের দম্ভে পা মাটিতে না ফেললে আপনার দেহের সাথে মাটি ভালো ব্যবহার করবে না। কিসের বাহাদুরি করি? আমি-ই কি আমার? মুহূর্তে এদিক-সেদিকে কবর পাওয়ার সৌভাগ্য থেকেও বঞ্চিত হতে পারি! কত লাশ পানিতে গিলেছে, কত শরীর বেওয়ারিশ থেকেছে! চাকুরী পেয়ে বেকারকে খোঁটা দিচ্ছেন? বেকারত্বকে তুলো-ধুনো করছেন? অতীত ভুলো যাওয়া সহজ বটে তবে প্রকৃত মানুষে ছাপ রাখা অতোটা সহজ নয়! এজন্য তপস্যা করতে হয়! ভেতরে মানবিক বোধ না থাকলে, পরশ্রীকাতরতা রোধ করতে না পারলে, দম্ভ-অহমিকা চূর্ণ না করলে তাকে মানুষ বলতেই হবে এমন ঠেকা পড়েছে কার? যেটুকু ভালো সেটুকের আলোকে ফোকাস করতে না পারলে মানুষের ঘৃণা থেকে কে রক্ষা করবে? অর্থ-বিত্ত-ক্ষমতা অর্জনের চেয়েও ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা জোরদার হওয়া জরুরী। কতশত ধনী-গণীকে, কত কত ক্ষমতাধরকে দুনিয়া ভুলে গেছে কিন্তু প্রত্যেক গুণীকে, প্রত্যেক ধ্যানীকে, প্রত্যেক ভালো মানুষকে প্রকৃতিও মনে রেখেছে। যেখানে পড়েছে ভালো মানুষের ছায়া সেখানে বয়েছে মানবিকতার ফল্গুধারা। আমাদের যা বর্জন করার কথা সেসব অর্জনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছি! কি ন্যায়, কি অন্যায়-সব চুলোয় দিয়েছি! বড় কবি হয়ে লাভ নাই। ভালো মানুষ হতে হবে। বিশাল বস হয়ে মানুষের হৃদয়ে স্থান করতে পারলে সব স্বার্থকতা ব্যর্থ। ছোট্ট জীবনে বড় বড় মানুষেরাই জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করেছে। তাদের দেখানো পথে, ছোটানো রথে স্বার্থহীন ভালোবাসা চেপেছে। কুঁড়েঘরে থেকেও পেয়েছে খ্রিষ্টের সম্মান। জাফরানের গালিচায় হেঁটেও যদি সাধারণের ভালোবাসা না পাওয়া যায় তবে সব আয়োজন বৃথা! সব ক্ষমতায় ময়লা! সব নিয়নবাতি ঢাকা পড়ে কয়লায়! বড় মানুষ হতে হবে! এছাড়া আর সবকিছুতে বড় হয়ে কোন লাভ নাই যদি ভালো মানুষের কাতারে দাঁড়াতে না পারি! শপথ ভুললে সময় তবে পড়াবে আমার সাথে আড়ি!
রাজু আহমেদ।
কলামিস্ট।
[email protected]

[wps_visitor_counter]