অভিযোগ কমলে উপভোগ বাড়বে

প্রকাশিত : নভেম্বর ২৪, ২০২৩ , ৫:৫৩ অপরাহ্ণ

এমন মানুষের সাথে সময় কাটাতে হবে যেখানে সময়কে দীর্ঘ মনে হবে না। এমন মানুষের সাথে হাঁটতে হবে যার সাথে দীর্ঘপথ চললেও পথকে দীর্ঘ মনে হবে না। এমন বসের অধীনে কাজ করতে হবে যেখানে কর্ম-ঘণ্টা সংক্ষিপ্ত মনে হয়। জীবনের জার্নিটাকে যত সংক্ষিপ্ত করা যাবে সেটা তত উপভোগ্য হবে। সময় অনুকূলে থাকলে ৬০-১০০ বছরও সংক্ষিপ্ত মনে হতে পারে আবার প্রতিকূলতার সময়ে এক সপ্তাহও অতিদীর্ঘ লাগতে পারে! জেলখানার চার দেয়ালের একদিন আর ভৃত্য বেষ্টিত ক্ষমতার চেয়ারের একদিন মোটেও একরকম কাটে না। অপেক্ষার সময় সব সময় দীর্ঘ। সুখের রাত ফুড়ুৎ করে ফুঁড়িয়ে যায়!
মোটকথা জীবনকে যতটা সম্ভব উপভোগ্য করতে হবে। একটু আঘাতেই হতাশ হয়ে দিন খোয়ানো ঠিক নয়। কারো সামান্য কথায় মন খারাপ করে থেমে থাকলে সময়ের যাত্রাও ধীরতালে ব্যথায় কুঁড়ে কুঁড়ে মলম লাগাবে। যাতে যন্ত্রণার উপশমের বদলে আরও বাড়বে। অনেক অপূর্ণতার মধ্যেও, অনেক প্রতিকূলতা এড়িয়েও সুন্দরভাবে বাঁচা যায়। সবকিছু পাওয়ার লোভ এড়িয়ে যা কিছু আছে সেগুলোকে যত্ন করে ভালো থাকা যায়। আরও চাই, আরও চাই স্পৃহা হতাশা বৃদ্ধি করে, অপেক্ষা দীর্ঘায়িত করে। যে জীবন শত বছরের নয় সে জীবনে সহস্র বছরের ব্যথা টেনে আনা কোনভাবেই ঠিক নয়। প্রসন্ন চিত্তে দু’দণ্ড বাঁচার মাঝে তৃপ্তি আছে।
মানুষের সব আয়োজন সুখের জন্য। দুঃখকে অনুষ্ঠান করে আনতে হয় না। লোভ তাড়ালে, ভোগ কমালে শোক আপনা-আপনি কমে আসবে। সবার কাছে যদি মূল্যায়ন চাই, সবার থেকে যদি সম্মান চাই তবে ক্ষণে ক্ষণে আঘাত পেতেই হবে। চারপাশের সবাই বিশ্বাস অক্ষত রাখতে সচেষ্ট নয়; সে আশাও করতে পারি না। আমার দায়িত্ব, আমার বিশ্বাস যদি রক্ষিত হয় তবে আমার অনেক অধিকারই অরক্ষিত হবে না। একটা সুখী কুকুরের থেকেও অসুখী মানুষের অনেক কিছু শেখার আছে। যদি সুখের নাগাল পেতে সচেষ্ট না হই তবে অধিকাংশ সুখের সাথে এই জীবনের সাক্ষাৎ হবে না। দীর্ঘ অপেক্ষার রাতের ভোর হবে না। তিমির-নিশায় ঘুরপাক খেতে খেতে জীবন ফুঁড়িয়ে যাবে। তবে জীবন পুড়িয়ে যাবে আরও বহুক্ষণ নিয়ে।
মানুষ বাছাই করে তবেই বন্ধু হোক। কর্মের মাঝে তৃপ্তি খোঁজার বন্দোবস্ত হোক। ছোট্ট সময়কে দুঃখ-কষ্টে কাহিল করে দীর্ঘায়িত করলে সে জ্বালা পরের হবে না। এমন মানুষের কাঁধে মাথা রাখুন যে স্বপ্ন দেখাতে পারে, যে যত্ন করতে জানে। এমন মানুষের সাথে আড্ডায় মাতুন যারা জীবনকে উপভোগ করতে পারে। যারা অভাবের কথা বলে বিষাদ জায়গায়, যারা ভোগের কথা বলে লোভ বাড়ায়, যারা দুঃখ দুঃখ করে চারপাশ বিষণ্ণতায় ডোবায় না -তাদের সঙ্গ থেকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। একটা সংক্ষিপ্ত সুখী জীবনের অধিকারী হওয়া সৌভাগ্যের। সেজন্য আপনাকে আয়োজন করতে হবে। ক্ষণ উপভোগের বন্দোবস্ত করে সুখ ভাগাভাগি করতে হবে। ত্যাগের মানসিকতা শক্ত করতে হবে। ধৈর্যের শক্তি থাকতে হবে।
আপনার সুখের ভাগীদার হতে অন্যরা হাত বাড়িয়ে রাখবে কিন্তু দুঃখের ছিঁটেফোঁটাও কেউ নেবে না। সে একান্তই আপনার। কাজেই জীবনে কি অর্জন করবেন, কাদেরকে সেখানে রাখবেন সেসব অপরিকল্পিত আয়োজনে করবেন না। যে জীবন আপনার সে জীবন দোয়েলের মত হোক। যে জীবন আপনার সে জীবন শালিকের মত হোক। একটু সুখের জন্য বৃষ্টিতে ভিজুন, সমুদ্রে নামুন, পাহাড়ে উঠুন। বদ্ধ ঘরে নিজেকে আরও বদ্ধ করে রাখলে সুখ ছোঁয়ার সব পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। জীবনে ক্ষুদ্ধতার চেয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভব উপভোগ করা জরুরী। মায়া-মমতার ছোঁয়া পাওয়া দরকারি। জীবন সংক্ষিপ্ত করুন; সময়ে নয় যাত্রায়। অভিযোগে নয় উপভোগে।

রাজু আহমেদ।
কলামিস্ট।
[email protected]

[wps_visitor_counter]