জীবনের অমোঘ পরিণতি

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২০, ২০২৪ , ৩:০৭ অপরাহ্ণ

আমরা যা প্রচার করি, যা দেখাই তা নিজের জন্য যতোটুকু করি তার অধিক করি অন্যের বেদনা জাগাতে। আমরা ভেতরে ভেতরে মারাত্মক প্রতিশোধ পরায়ণ! দেখ, আমারে কি সুন্দর লাগছে, দেখ আমার বউ/স্বামী কি সুন্দর! শোন ব্যাটা কতো বড় চাকুরি করি! দেখ আমার ক্ষমতা! জানিস আমার পোশাকের দাম! দেখ, এ বেলায় কি খেলাম! দেখ কোথায় কোথায় ঘুরলাম!

আজ যারা মাটির বিছানায় চিরকালের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছে, যারা চিরদিনের জন্য মুছে গেছে আত্মীয়ের তালিকা থেকে, তারাও কি কম ছিল! বিত্ত-প্রতিপত্তিতে যার-তার সাথে টেক্কা দিতে পারত! আজ কই সে-সব? যাদেরকে ক্ষমতা দেখাতে চেয়েছিল, যাদের দেখে নিতে চেয়েছিল তাদের না দেখেই ঠাণ্ডা মাটিতে, কেঁচো-সাপের জমিতে, পঁচা পানিতে কি শান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে!

এক জেনারেশন, বড়জোর দুই জেনারেশন-এরপর আর কেউ তাদের খোঁজ জানে না! কত মানুষের কবরের ঠিকানাও হারিয়ে গেছে! কি নাম ছিল, কি কাম ছিল-সব হারিয়ে গেছে! তার বাড়ি/সম্পত্তি যারা ভোগদখল করে তারাও জানে না কোন পথে এসব অর্জিত হয়েছিল! সেই সৌন্দর্য, সীমাহীন দাপট আজ কোথায়? পরাজিতের নাম হয়তো টিকে গেছে কিন্তু যারা ছিল প্রচণ্ড প্রতাপশালী তাদের শেষ চিহ্নটুকুও বিলুপ্ত হয়ে গেছে!

অহংকার, ক্ষমতা-দাপট চিরকাল টেকে না! কবরের পাশে দাঁড়ানোর মানুষ থাকে না! কাউকে উপকার করলে সেটা থেকে যায়! কারো ক্ষতি করলে সে ছাপও রেখে যায়! কি নিয়ে বাহাদুরি করি? আজও দেশ থেকে শত শত মানুষের কবরে ঠাঁই হয়েছে! কেউ কেউ তো কবরও পেলও না! গতকাল তার সাথে কথা হয়েছিল সে নাই! সম্পদের জন্য পাগল থাকা লোকটা হাসপাতালের শয্যাপাশে একজন আপন মানুষ পেলো না-এর চেয়ে দুঃখের আর কি হতে পারে? কাদের জন্য, কীসের জন্য এই মহারণ?

পৃথিবীর আয়ুর তুলনায় আমার পথচলা বালুকণার সমান! সেখানে ক্ষমতা দেখিয়ে কি লাভ? অন্যের ক্ষতি করে নিজের যে গতি হলো সেটার গন্তব্যও তো কবর! যদি আঁকড়ে ধরে থাকতে পারতে, ভোগ করতে পারতে কামনার সবটুকু তবেও না-হয় এই প্রতিযোগিতার মূল্য ছিল! সম্পদের বণ্টন না হওয়াতে কবর না দিয়ে সন্তানদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি চলছে, কে কি পাবে সেটা চিৎকার করে রাগে-ক্ষোভে বলছে-মূল্য কি এই জীবনের!

৩০-৩৫ বছরের ক্ষমতা পেয়ে ঘুষ, দুর্নীতিতে রাষ্ট্রের সম্পদ তছনছ করা, অন্যের অধিকার হরণ করা, কাউকে ঠকিয়ে অভিশাপে পরা-এসবেরও মরণের পরে হিসেব হবে! যেদিন ক্ষমতা চলে যাবে, শরীরের তেজ ফুরিয়ে আসবে সেদিন জিল্লতির পরিপত্র জারি হবে! যে জীবন মানসিক শান্তির দেখা পেলো না, হারামের আরাম ছেড়ে দিল না, তাকে ভুগতেই হবে! মরণের আগে ও পরে নীতির প্রতিশোধ ফিরবেই! দহন-দমন করবেই।

রাজু আহমেদ।
কলাম লেখক।
[email protected]

[wps_visitor_counter]