দুঃখের কারণ দূরের মানুষ নয় কাছের মানুষ

প্রকাশিত : জানুয়ারি ৩০, ২০২৪ , ১০:৩৬ অপরাহ্ণ

জীবনাচারের ওপর সাধু-সন্ন্যাসী-বেশী কিছু বাটপার-লম্পট ভর করে। এরা যুক্তি দিয়ে অনেক কিছু বোঝায়, দুর্বলতায় খোঁচায় এবং চরিত্র লুকিয়ে মুখোশে অনেক কিছু জানায়! মিশতে গেলে, ভালোবাসতে গেলে, বন্ধুত্ব করতে গেলে তবেই আসল রূপ বেরিয়ে আসে। লেনদেন হলে আরও নগ্ন-ভাবে মানুষ ও মুখোশের পার্থক্য ধরা পরে। তখন মানুষের মুখোমুখি দাঁড়াতে ভয় হয়। মানুষ এবং ছদ্মবেশীর রূপ-প্রকৃতি নগ্ন-রূপে প্রকাশ পেলে মানুষের ওপরে মানুষের বিশ্বাস হারায়।

দূরের মানুষ কাউকে ব্যথা দেয় না, কারো বিশ্বাস ভাঙে না কিংবা কাউকে কাঁদায় না। পর মানুষের সেই সুযোগ এবং দুঃসাহস থাকে না। ঘরের মানুষ, আপন মানুষ বেশি ব্যথা দেয়, হুট-হাট হৃদয়-ভাঙে। দিবারাত্রির চোখের জলের কারণ হয়। এরা দুঃখ পেতে বারণ করে নিজেরাই দুঃখের কারণ হয়। কারণের চেয়ে অকারণে বেশি দুঃখ দেয়। অবহেলা করে করে, ঠকিয়ে কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে হৃদয় ভাঙে। সম্পর্কের থেকে আস্থা উঠিয়ে নিতে বাধ্য করে। ভালোবাসার পথে শঙ্কা-সংশয় তৈরি করে। মানুষে মানুষে বৈরিতা তৈরি করাই যেন একমাত্র কাজ।

মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে, পাক্কা পাক্কা যুক্তি দেবে, সম্মুখে সম্মান করবে অথচ অন্তর বদবুদ্ধি আর স্বার্থপরতায় ভরে রাখে। সারশূন্য যুক্তির অন্তরালে সে বিষয়ে বিশ্বাস কিংবা অনুসরণ নাই। পেছনে কিংবা সুযোগ পেলেই চোখ উল্টাবে। লাঠি নিয়ে পেছনে কাঠি করবে! মানুষকে ঠকানোর, ধোঁকা দেয়ার, হয়রানি করার অস্ত্র হিসেবে মিষ্টভাষা ব্যবহার করবে। এই সাধু-শয়তানদের দোসর বেশি। তাদের মিছিলে সমর্থক বেশি। এরা মিথ্যাকে সত্য হিসাবে উপস্থাপন করতে পারে। সুনিপুণ দক্ষতায় চোগলখোরি করতে পারে। এর স্বার্থের প্রশ্নে অন্ধ হতে পারে। বিবেকের সকল দ্বার বন্ধ করে সবার বিচার করতে পারে! কখনোই নিজের বিচার করে না! নিজের কোন দোষ দেখে না।

এরা সামাজিক শৃঙ্খলার অন্তরায়। ভালো মানুষদের জন্য হুমকি। যিনি চোর, যারা বদমায়েশ তারা যদি সর্বোচ্চ নীতিকথা বলে তখন মানুষ বেশি বেশি ধোঁকায় পড়ে। এরা মসজিদেও যায়, মন্দিরেও ধায়! কাবায় যায় আবার গোয়ায় যায়! সিনেমাতেও যায় আবার মদশালাতেও যায়! মন্দ মানুষের পাড়ায় নিত্য যোগাযোগ থাকে। এই মানুষগুলো খোদাকেও ডাকে আবার শয়তানের দলও ত্যাগ করে না। এহেন পাপ নাই যা এরা করতে পারে না। মানুষের ক্ষতি করতে এদের একটুও বুক কাঁপে না।

যারা ঘোষণা দিয়ে অন্যায় করে, নিজেকে খারাপ হিসেবে জাহির করে তারা সমাজের জন্য বড় হুমকি নয়। কেননা মানুষ তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকে। কিন্তু যারা অপরাধ করে গোপনে, কারো ক্ষতি করে আড়ালে তাদেরকেই সাংঘাতিক ভয়। বিশ্বাস ভেঙে দিতে পারা অমানুষগুলো পশুরও অধম। এদের মুখে হিংস্রতার দাগ নাই বটে কিন্তু অন্তরে নৃশংসতা ও বর্বরতা লালন করে। এরা কথা দিয়ে, আচরণ দিয়ে মানুষকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিতে পারে। সম্পর্ককে শত্রুতায় বদলে দিতে পারে। কাজেই মুখোশ-ধারী শত্রু থেকে সাবধানে থাকতেই হবে।

জীবনের সাথে কে জড়িয়ে যাচ্ছে, কার সাথে বন্ধুত্ব পাতাচ্ছি কিংবা কাদের আড্ডায় মেতেছি সে ব্যাপারে বিবেকের সাইন থাকতেই হবে। দুষ্ট শ্রেণীর কাছের মানুষ দিয়ে জীবনকে নরকে পরিণত করার অর্থ নাই। সুখের জন্য অনেক মানুষের দরকার হয় না। অল্প মানুষ, বিশ্বস্ত মানুষ এবং উপকারী মানুষের সমন্বয়ে জীবন পরিপূর্ণতার দিকে ধাবিত হোক। সংক্রমণ অল্প হলেও গোটা দেহের শান্তি কেড়ে নেয়। মনের শান্তির জন্য নিজের বিশ্বস্ততা অটুট রাখা যেমন জরুরি তেমনি মিলে থাকা মানুষগুলোর থেকেও তেমন আচরণ পাওয়া জরুরি।

রাজু আহমেদ।
কলাম লেখক।
[email protected]

[wps_visitor_counter]