বয়সের ফ্রেম সময়ের প্রেম

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪ , ১১:৪৩ অপরাহ্ণ

প্রতিকি চিত্র।

দু’জনের যে সকল সম্পর্ক বা চুক্তি তাতে একজন যত ভালো হোক, সেক্রিফাইস করুক, বিশ্বস্ত থাকুক কিংবা দায়িত্ববান হোক তাতে মিলেমিশে ভালো থাকা প্রায় অসম্ভব। দু’জনের দু’জনই যদি অল্প-বিস্তর ভালো হয়, একটু-আধটু সেক্রিফাইস করে, বিশ্বাস-ভরসায় পূর্ণতা আনে এবং কম-বেশি দায়িত্ব পালন করে তবে সুখময় সহাবস্থান হবেই। নিজেরটা খাড়া খাড়া আর পরেরটা বাকি থাকলে শান্তির মা ফাঁকি দেবেই। দু’জনের যৌথ পদক্ষেপে যে জীবন ধন্য হয় সেখানে একজন শুয়ে রোদ পোহাবে আরেকজন খরতাপে ছুটোছুটি করে নিজেকে পোড়াবে তবে আর চুক্তির প্রাসঙ্গিকতা থাকে না!

যৌথ সম্পর্কে স্বতন্ত্র স্বাধীনতা প্রবল হলে মেয়াদ ফুরানোর আগেই স্বপ্ন ফুরিয়ে যায়! জীবনের পথে চলতে চলতে সুখ কুড়াতে হয়। ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য এবং যুক্তি পোক্ত-ভাবেই থাকতে হবে। তবেই তো ব্যথা থেকে, সংকীর্ণতা ও স্বার্থ থেকে মুক্তি মিলবে। দু’জনে এগিয়ে এলে, হাত-ধরাধরির সাথে সাথে যদি মনের চাওয়া-পাওয়াগুলো মেলানো যায় তবেই স্বপ্নরা আলোর পথে পাখনা মেলবে। একজন চুপ করে থাকবে আরেকজন রাজ্যের সব কথা জমা করবে-ব্যাপার এমন হলে একটা কেমন কেমন পরিস্থিতি হবে কিন্তু চলার পথ ফুড়াবে না এবং চাওয়ার সব পূরণ হবে না।

বোঝাপড়ার দ্বন্দ্ব প্রবল হলে, ইচ্ছা-অনিচ্ছার ক্ষেত্রে অনমনীয়তা দেখালে, নিজের স্বার্থ বড় করলে সেটা আর প্রশান্তির সম্পর্ক থাকে না। পাশাপাশি থেকেও মিলেমিশে না থাকা, একই সুতায় বেঁধে সেখানে দেয়াল তোলা-এসব অল্পদিনের জীবনের বড় দুঃখ হয়ে একদিন হাজির হবে। মন খারাপে দিন খোয়ালে সে দিন অন্য কার খোয়া যাবে? ভালো না থাকলে, ভালো না রাখলে এ বসুধার কারো কিচ্ছু আসবে যাবে না। যে ভালো না থাকবে এবং যাকে ভালো না রাখবে-ক্ষয়ক্ষতি তা দু’জনেরই। এসবের ক্ষতিপূরণ জীবনের একটা অংশ থেকেই দিতে হবে। অথচ জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষণ রঙে রাঙাতে, রসে পরিপূর্ণ হতে পারতো!-সামান্য সামান্য প্রচেষ্টাতেই। তখন একটা অসামান্য ব্যাপার ঘটত।

দু’জন দুমুখো হলেও জীবন বয়ে যাবে! তবে যেদিন অনুশোচনার অনুভূতি জাগ্রত হবে সেদিন প্রায়শ্চিত্তের পথ থাকবে না। মুখোমুখি হওয়ার মুখ থাকবে না। উপভোগ করার বেলা থাকবে না। ফুরিয়ে যাবে সব সকাল, বয়ে যাবে সব বিকাল এবং ঘুমিয়ে থাকবে রাত। আজ যদি অবহেলায় মরে যায় কারো ইচ্ছা, মান-অভিমানের ভাষা না বুঝে দূরত্ব বাড়ে মনের, সামর্থ্য-সক্ষমতার বুঝ না বুঝেই দীর্ঘ হয় আবদার, কেউ যদি একাকী চাঁদ উপভোগ করতে শেখে তবে সেটা সম্পর্কের জন্য এলার্মিং। যে চলায় দু’জন দু’জনার সেখানে শক্ত করেই দু’হাত আগলে থাকুক। বিশ্বাসের দেয়াল উঁচু হোক। ভরসার ছায়া লম্বা হোক।

ভালো থাকার জন্য, ভালো রাখার জন্য, সুন্দর মুহূর্তের জন্য, সময় উপভোগের জন্য ইচ্ছা থাকতে হয়! বাসনা রাখতে হয়। আজ বিকেলের যে রঙ, আজ বারিষের যে দ্যোতনা, আজ বাতাসের যে স্পর্শ তা কাল নাও থাকতে পারে! যদি টিকেও যায় তবে ইচ্ছা বেমালুম ভুলিয়ে দেবে গন্তব্য! বয়সের ফ্রেম, সময়ের প্রেম-এসবের আলাদা আলাদা আবেদন আছে! মন খারাপে কাটিয়ে দেয়া রাত, আলাদা হওয়া খাট, দুজনের দুই মেরুর ঘাট-এসব কুচিন্তা আনয়নে হাওয়া দেয়! সুতরাং সম্পর্ক সুসম্পর্কের হোক! দূরে রাখা/থাকা সম্পর্কে তৃতীয় কোন ছায়া পড়ে!

রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক!
[email protected]

[wps_visitor_counter]