কৃতজ্ঞদের প্রতিও রবও সন্তুষ্ট

প্রকাশিত : মার্চ ৩, ২০২৪ , ১১:০৫ অপরাহ্ণ

প্রতিকি চিত্র।

সব পথ বন্ধ হওয়ার পরেও যে সুযোগ তৈরি হয় সেটাই রবের রাহমাহ! সব আশা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও সম্ভাবনার যে বীজ উঁকি দেয় সেটাই মালিকের বারাকাহ! ভাবছেন, এটা এমনি এমনি হয়? যা কিছু পেয়েছেন তা শূন্য থেকে এসেছে? মোটেই না। এসব গোলামের ওপরে মালিকের দয়া থেকে আসে। অতীতে ফেলে আসা কোন সৎকর্মের বিনিময়ে প্রতিদান হিসেবে হয়। ভবিষ্যতেও রবের ওপর কৃতজ্ঞ থাকবেন কি-না কিংবা তাঁর সিদ্ধান্ত আপনার জন্য যথার্থ মনে করেন কি-না সেটাকে পরীক্ষা করার জন্যেও হয়!

জীবনে হাজারো পরীক্ষার মুখোমুখি করে তবেই স্রষ্টা তাঁর সেরা সৃষ্টিকে চূড়ান্ত সফলতার মুকুট পরাতে চান। অন্তর্জগতে দিতে চান চিরমুক্তির সুসংবাদ। আমরা কিছু আশা করে সেটা না পেলেই চরমভাবে হতাশ হই, ভাগ্যকে দোষারোপ করি। স্রষ্টাকেও দায় দেই! অথচ তিনি সেটা আপনাকে দানের চেয়ে না দেয়ার মধ্যে অধিক কল্যাণ রাখতে পারেন। জীবনে এমনও বহুবার ঘটেছে, প্রত্যাশাতেই ছিল না অথচ তিনি এমন কিছু দিয়েছেন যাতে অন্তরাত্মা প্রশান্তময় হয়েছে। বারবার সিজদায় অবনত হতে মন চেয়েছে। হয়নি?

কত বিপদ, ঘোর অমানিশা এমনি এমনি উৎরে গেছে? এমন বিপদের মুখোমুখি হয়েছিলেন, যেখান থেকে আপনার দৃষ্টিতে মুক্তি অসম্ভব ছিল অথচ তিনিই উৎরে দিয়েছেন! এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন যেখানে ইজ্জত হারানোর ভয় ছিল, জীবন খোয়ানোর শঙ্কা ছিল অথচ তিনি মুক্ত করে ইজ্জত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি মানুষকে না চাইতেই এমন এমন কল্যাণ দান করেন যা কৃতজ্ঞ বান্দাদের জন্য অসীম অনুগ্রহ এবং নিদর্শন । অথচ মানুষ না শুকরিয়া আদায় করে। তবুও রহমান বান্দার থেকে বারাকাহ তুলে নেন না। তিনি বুঝতে পারার জন্য, ভুল ভাঙার জন্য সময় দেন।

আমরা যেভাবে অবাধ্যতা প্রকাশ করি, অকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি তাতে রাহমান যদি মুহূর্তের জন্য মায়া-হীন হতেন তবে আমাদের ধ্বংস কে ঠেকাতেন? তিনি প্রয়োজনের অধিক দিয়েছেন অথচ ইমানের পরীক্ষায় আমরা বারবার ফেইল! শোকরিয়ার হাটে আমরা ফকির। অথচ তিনি ভোগের উপকরণ বাড়িয়েই যাচ্ছেন। সৃষ্টির সামনে ঝুড়ি ঝুড়ি নেয়ামতরাজি রোজ না চাইতেও রাখছেন!

মাত্র এক মওসুম যদি বৃষ্টি বন্ধ রাখতেন, পক্ষকাল যদি সূর্য লুকিয়ে রাখতেন, এক সপ্তাহ যদি পানি বন্ধ রাখতেন, একদিন যদি বাতাস বন্ধ রাখতেন, কয়েক মিনিট যদি অক্সিজেন বন্ধ রাখতেন তবে এই ধরণীর কি পরিণতি হত? মানুষের মত দুর্বল জীবের কোন হাল হত? কে বাঁচাত? ওহে মানবসকল,চিন্তা করো। বিপথগামী হয়ো না।

মাথামোটা না হয়ে বিনীত হতে শিখি। আমার মত ক্ষুদ্র মানুষের শক্তি-সামর্থ্যে এই পৃথিবীর একটা ধূলিকণাও তৈরি হয় না! সন্তানের বাপ-মা হওয়ার ক্ষমতা মানুষের নাই যদি না মহান রব সাধ্য দিতেন। কত নিঃসন্তান দম্পতি আমাদের চোখের সামনে ঘোরে! ততাদের দীর্ঘশ্বাসে দুঃখের মিছিল বহে। মাত্র একটু ডিস্টার্ব তাতেই কেউ কানে শোনে না, কেউ কথা বলতে পারে না কিংবা-কেউ চোখে দেখে না-এমন কাউকে কি চোখে পড়ে না? দুনিয়ার ডাক্তাররা কি করতে পেরেছে? সুতরাং অবাধ্যতা নয় বরং স্যারেন্ডার। নত হও, নত হও। যিনি দুনিয়ায় রেখেছেন তিনিই আখেরাতে নিবেন এবং ওয়াদা পালন করবেন।

বিনয় মানুষের সুন্দর শোভা। শৃঙ্খলিত পৃথিবীতে মানুষের জন্য শিক্ষার ক্ষেত্র আছে, আছে খোদায়ী নিদর্শন। কাজেই মানুষ যেন অহংকারী-দাম্ভিক না হয়। আমরা ক্ষুদ্র, অতি সামান্য। জন্মের পরে মুরগীর ছানার চেয়েও দুর্বল ছিলাম, সামান্য মাথা ব্যথায় বিশাল বপু গুলিয়ে যায়-কাজেই অহমিকা-ঔদ্ধত্যের অবকাশ নাই। নিশ্চয়ই খোদা কৃতজ্ঞদের প্রতি তার অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেন। আমরা যেন বঞ্চিত না হই। তাঁর অবাধ্যতা না করি।
রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক।
[email protected]

[wps_visitor_counter]