মানুষের পক্ষে পারিপার্শ্বিকতা এড়ানো কঠিন

প্রকাশিত : মার্চ ৮, ২০২৪ , ১১:২০ অপরাহ্ণ

প্রতিকি চিত্র।

কাউকে আদর্শ মানলে, পরম পূজনীয় করলে, হৃদয়ের মধ্যে সম্মানে রাখলে তাঁর খুব কাছাকাছি হওয়া ঠিক নয়। গুণী মানুষদেরও অন্ধকার অধ্যায় থাকে। তাঁর মতাদর্শ, চিন্তা-কথা দ্বারা যদি আপনি উপকৃত হন তবে সে-সবের মাঝেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখুন। তাদেরও ব্যক্তিগত জীবন থাকে, লেনদেন থাকে এবং বোঝাপড়ার ব্যাপার থাকে। দুনিয়াবি স্বার্থ তাকেও ঘিরে রাখে! সেও সব প্রতিশ্রুতি রাখতে পারে না এবং অনেক আবেগ আটকে চলতে পারে না! এই সময়ে নিষ্কলুষ মহামানবের সাক্ষাৎ পাবেন না নিশ্চয়ই! সেটা আশা করাও বোকামি! মানুষ তার পারিপার্শ্বিকতার খুব বেশি ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না।

আপনি আরেকজনের কি দ্বারা উপকৃত হচ্ছেন, তার কোন দিকটি আপনার ভালো লাগছে?-শুধু সেটুকুই অনুসরণ করুন। মাখামাখি রকমের সম্পর্ক করে কারো ব্যাপারে উচ্চ ধারণা ধরে রাখা যায় না। কারো সাথে স্বার্থের সম্পর্ক হলে, জাগতিক লেনদেন করলে তার সম্পর্কে আন্দাজ পাওয়া যায়। যেখানে আপনার শ্রদ্ধা কাজ করে, সম্মান উচ্চকিত থাকে সেখানে এইসব দেনা-পাওনায় জড়াবেন না! একই ব্যক্তি অবস্থান ভেদে বিভিন্ন চরিত্রের ধারক-প্রকাশক। আর আপনি শুধু সেটুকুতেই আবদ্ধ থাকুন যেটুকুতে আপনার মাঝে আলো আসে। অন্ধকার রাত থেকে নিয়েন! মানুষের অন্ধকার কেবল আঁধার নয় বরং থালা ভরা ঘৃণাও! স্ত্রীর জন্য বিশেষায়িত যে চরিত্র, দুনিয়ার অন্য রমণীদের জন্যও অনুরূপতা দেখলে নিশ্চয়ই ঘৃণা আটকাতে পারবেন না! যে সারাজীবন নীতিকথা বললো এখন নাকি তার নামেও শতকোটি টাকার দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে! কাছাকাছি হলে উচ্চ ধারণা পুষে রাখার সাধ্য কই?

দূর থেকে ভালোবাসা সুন্দর। যে মানুষের প্রতি আপনি উচ্চতর ধারণা লালন করেন, কাছাকাছি সৌরভ শুঁকতে এসে তা হারানোর মত বোকামি করবেন না! কথক তারকা আর কর্মের তারকায় তারকায় ফারাক আছে! কারো যে গুণ আপনাকে মুগ্ধ করে সেখানে আবিষ্ট থাকুন। পাশাপাশি ঘেঁষতে এলে, রাত-দিনভর মিশতে এলে মানুষের ওপর বিশ্বাস হারাবেন! কবি বলেছেন, ‘মানুষের ওপরে বিশ্বাস হারানো পাপ।’ কবির কবিতায়, শিল্পী গানে কিংবা গুণীর গুণে মুগ্ধ থাকুন। জীবন থেকে আশা-খুশি হারাতে হবে না। সাধুর শুদ্ধতা খোঁজা যায় কিন্তু রাখালের ধর্মজ্ঞান জানতে চাইলেই তো বিপত্তি বাড়ে!

একটি উপমা দেখতে পারি! লেখক হুমায়ুন আহমেদের প্রতি সবাই মুগ্ধ কিন্তু ব্যক্তি জীবনের হুমায়ুন আহমেদ কে কি সবাই পছন্দ করেছে? অথচ লেখক হুমায়ুনেই মানুষের আবদ্ধ থাকা উচিত ছিল। ধর্ম প্রচারকের ব্যক্তিজীবন জানতে হয়, প্রয়োজনীয়তাও আছে কিংবা নীতি কথকের আচরণীয় স্বভাব জানতে হয়, দরকারও আছে কিংবা একজন শিক্ষকের আদর্শ জানতে হয়, প্রয়োজনীয়তাও আছে কিন্তু একজন ডাক্তারের-মোক্তারের ব্যক্তিজীবন জানার কোন দরকার নাই। জানতে হবে তার দক্ষতা। মুগ্ধ থাকতে হবে তার গুণে! একান্তে পাওয়ার চিন্তাতেই সব অন্ধকার সামনে আনে!

দূরের চিত্র যত সুন্দর, যত কাছে আসবেন, পরখ করবেন তত দরদ হারাবেন। অন্যের মাঝের শুদ্ধতার চেয়েও আপনার প্রয়োজন পরিতৃপ্তি। সেজন্যই মানুষের ওপরে ভালো ধারণা পুষতে হয়। তার গুণ থেতে শুষতে হয়। সে কাঁচাবাজারে কিভাবে দরদাম করে সেটা জানতে যাওয়াই নিরর্থক। যে কাজ করে তার কাজকে ভালোবাসা জরুরি, সেটার ফলাফল পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। তার ইনটেনশান সবার কাছে কল্যাণকর নাও ঠেকতে পারে। নৈতিক বিচারে রবিনহুডের কর্মকান্ডের সমর্থক মিলবে না বললেই চলে তবে কাজের পরিণামে তাকে দোষী করা চলে? যুক্তি দু’ধারী তলোয়ার। দু’দিকেই সমানে কাটে! একই সত্যের পক্ষে ও বিপক্ষে সমান শক্তিকে প্রকাশ করা যায়। কল্যাণের দিকটিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিলেই বোধ করি ভালো হয়! দূর থেকে, আরও দূর থেকে ভালোবাসা পুষে রাখুন।

রাজু আহমেদ। কলাম লেখক।
[email protected]

[wps_visitor_counter]